সহজিয়া বৈষ্ণবসমাজে অনেক ব্যভিচার হইয়া থাকে, কিছু দু’-একজন এরূপ দুশ্চর তপস্যাশীল সাধক আছেন—যাঁহার সংবাদ এদেশ ছাড়া অন্যত্র কোথাও পৌঁছায় নাই। যিনি মন্দ জিনিষটাই দেখিবেন তাঁহার কোনও লাভই হইবে না; ভগবানের শ্রেষ্ঠদান এই দুটি চক্ষু তাহা যেন খনির মধ্যে মণির সন্ধান করে; শুধু লোহা খুঁজিয়া কোনও লাভ নাই।
এই পদাবলী—সাহিত্যের স্ফুরণ হইয়াছে মহাপ্রভুর লীলায়। পৃথিবী এই যুগে রণদুন্দুভিনিনাদে বধির হইয়া আছে। কোন্ যুগে এই দিব্যসঙ্গীত জগতের প্রতি কোণে ধ্বনিত হইয়া স্বর্গরাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিবে—তাহা জানি না। পৃথিবীর অন্য কোথাও শুধু এক মানব দেবতার রূপ ও গুণের আস্বাদ করিবার জন্য এরূপ বিশাল রসসাহিত্য—এরূপ অক্ষয় মধুচক্র রচিত হয় নাই। বৈষ্ণবকবিগণের প্রত্যেকের মধ্যেই ন্যূনাধিক পরিমাণে চৈতন্যের নামের ছাপ আছে। তন্মধ্যে শ্রীখণ্ডবাসী নরহরি সরকারের প্রতিটি পদেই গৌরাঙ্গের শীলমোহরাঙ্কিত, বাসুদেব ঘোষও চৈতন্যকথা ছাড়া কোনও কবিতা লেখেন নাই এবং কৃষ্ণকমল গোস্বামীর দিব্যোন্মাদ (রাই উন্মাদিনী) চৈতন্যচরিতামৃতের অঙ্কিত গৌরের ভাবাবিষ্ট মূর্ত্তি একেবারে জীবন্ত করিয়া তুলিয়াছে। সহস্র সহস্র লোক সেইসব গান শুনিয়া অশ্রুজলে ভাসিয়া গিয়াছে।
হে মহাভাগ, তুমি কে, কেন আসিয়াছিলে—জানি না। যোগীরা যাহাকে ক্ষণমাত্র ধ্যানে পাইয়া পুনরায় পাইবার জন্য যুগ যুগ তপস্যা করেন, তুমি কি সেই তপস্যার ধন? সংসারে ত কেবল স্ত্রী-পুত্রের ভালবাসার জন্য দিবারাত্র কাঁদিয়া থাকে, সন্ন্যাসীরা তোমাকে খুঁজিয়া বেড়ায়, সিদ্ধপুরুষেরা কতকগুলি অলৌকিক শক্তি অর্জ্জন করে—কিন্তু তোমার মত কোন্ যুগে কোন্ দেশে ভগবানের জন্য এমন করিয়া