চণ্ডীদাস কাহিলেন—
“সবার বাঁশী কাণে বাজে,
বাঁশী বাজে আমার হিয়ার মাঝে।”
সে সুর বন্যার মত, দস্যুর মত ঘর-দোর ভাঙ্গিয়া প্রবেশ করে। আমি রান্না-ঘরে রাঁধিবার আয়োজন লইয়া বসিয়াছি—
“বাশীর সুরেতে মোর এলাইল রন্ধন।” (চ)
তখন হলুদ দিতে যাইয়া ধ’নে দিয়া ফেলিলাম, সর্ষে দিতে যাইয়া নুন দিলাম, সব ভ্যাস্তা হইয়া গেল।
বাঁশী আর বেজ না–—
“খল-সংহতি সরলা—তা কি জান না বাঁশী
আমি একে নারী, তায় অবলা” (চ)
আমি সরলা, খলের সঙ্গে আমার বাস, তোমার পাগল-করা সুরে আমার সকল কাজেই ভুল হয়,—চারিদিক্ হইতে নিন্দা ও বিদ্রুপের বাণ বর্ষিত হয়।
কে সে যিনি বাঁশী বাজাইতেছেন?
“কে না বাঁশী বায় সখি, সে বা কোন জনা।”
সুর আমায় পাগল করে, তিনি যিনিই হউন, আমার সাধ হয়, তার পায়ে নিজকে বিকাইয়া ফেলি।
কে সে তিনি “মনের হরষে” বাঁশী বাজাইতেছেন, আনন্দ-স্বরূপ স্বয়ং পরমানন্দে বাঁশী বাজাইতেছেন, কিন্তু তাঁর পায়ে আমি কি অপরাধ করিয়াছি, সেই সুরে যে আমার সংসার ভাসিয়া যায়! চোখের জলে পথ দেখিতে পাই না,—
“অধোরে ঝরায়ে মোর নয়নের পাণি,
বাঁশীর শবদে মুঞি হারাইলো পরাণী।” (চ)