পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/২৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
পদাবলী-মাধুর্য্য

“দাদা বলাই সঙ্গে ছিল” লজ্জায় মুখ উঁচু করিয়া কালো রূপ দেখিতে পারেন নাই। আনত চোখে যমুনা-জলে বিম্বিত কৃষ্ণকে দেখিতে ছিলেন, তিনি তখন জ্ঞান-হারা। সেই আনন্দময়, চির-সুহৃৎ, যিনি রূপের রূপ, সখার সখা, অন্তরে বাহ্যে জীব নিরন্তর যাঁহাকে খুঁজিতেছে, কখনও শিশুর হাস্যে, রূপসীর রূপে, মাতৃ-অঙ্কে, ফুলে-পল্লবে—পৃথিবীর সহস্র শোভায়—ধনে, মানে, প্রতিষ্ঠায় যাঁহার সন্ধান করিয়া সহস্রবার ভুল করিয়াছে—অমৃতকুণ্ড-ভ্রমে কূপে পড়িয়াছে—সেই রূপের সন্ধানে এ-ঘরে ও-ঘরে ঘুরিয়া ফিরিয়া ব্যর্থকাম হইয়াছে—আজ বহুদিন পরে, যুগ-যুগান্তের শেষে তাঁহাকে প্রথম দর্শন! এ কি অভাবনীয় আনন্দ! চৈতন্যদেব বলিয়াছেন—

“সর্ব্বত্র কৃষ্ণের রূপ করে ঝলমল।
সে দেখিতে পায় যার আঁখি নিরমল॥”

তিনি তো সর্ব্বত্রই আছেন, কিন্তু তাঁহাকে দেখার নির্ম্মল চক্ষু আজ রাধা পাইয়াছেন। যমুনার জলে প্রতিবিম্বিত কৃষ্ণকে দেখিয়া তিনি যুগ-যুগান্তরের কষ্ট ভুলিয়া গেলেন। সখীরা জলে কলসী নামাইবেন, রাধিকা বলিতেছেন–

“ঢেউ দিও না জলে বলে কিশোরী।
দরশনে দাগা দিলে হবে পাতকী॥” (গো, ক)

কলসী জলে ডুবাইলে জলে আঁকা কৃষ্ণের ছায়া ঢেউ-এ ভাঙ্গিয়া যাইবে, এজন্য রাধা নিষেধ করিতেছেন; যিনি যোগীর যোগানন্দ, প্রেমিকের প্রেম-সিদ্ধি, যুগ-যুগ তপস্যার ফলে মুহূর্ত্তের জন্য তাঁহাকে পাইয়াছিলেন—এই আনন্দে বাঁধা দিলে পাপ হইবে, রাধা মৃদুস্বরে মিনতি করিয়া তাহাই বলিতেছিলেন।

 তাহার পরের কথা চণ্ডীদাসের পদেই পাওয়া যাইবে।