৬৷ আনন্দ
রাধা তাঁহার মনের অবস্থা কাহাকে বলিবেন? কেই বা তাহা বিশ্বাস করিবে? কেন অহেতুক দিন-রাত্র অঙ্গ শিহরিত হয়—আনন্দ হৃদয়ে উথলিয়া উঠে, চক্ষুকে সামাল দিব কিরূপে? আনন্দ-ঘন অশ্রু কি করিয়া রোধ করিব? যাহা ভাবি, তাহাতেই হর্ষোজ্জ্বল চক্ষে অশ্রু বহিয়া যায়। লজ্জায় গুরুজনের কাছে দাঁড়াইতে পারি না—
“গুরুজন আগে দাঁড়াইতে নারি।
সদা ছল-ছল আঁখি।” (চ)
যেদিকে তাকাই, সেইদিকেই তাঁহার প্রকাশ—পুলকে চিত্ত ভরিয়া যায়:
“পুলকে আকুল, দিক্ নেহারিতে, সব শ্যামময় দেখি।” (চ)
কিন্তু একটা সময় আছে, যখন আমি আর আমাতে থাকিতে পারি না। সন্ধ্যায় যখন—
“রবি যায় নি পাটে,”
অস্তচূড়াবলম্বী সূর্য্য যখন পশ্চিম আকাশে স্বর্ণাক্ষরে কি লিখিয়া যান, কলসীকক্ষে সখীরা যমুনাতীরে যায়, তখন রাধার যে অবস্থা হয়, তাহা অবর্ণনীয়।
“সখীর সহিতে জলেরে যাইতে
সে কথা কহিবার নয়।” (চ)
যমুনায় সখীদের সঙ্গে যাইবার পথে রাধার মন কেমন করে, তাহা বলিবার নহে। রাধিকা অত্যধিক মনের উচ্ছ্বাসে সে কথা বলিতে পারিতেছেন না, তাহা বলিতে যাইয়া ভাবাবেগে কণ্ঠরোধ হয়, কেবল মাত্র দুটি কথায় মনের সেই অব্যক্ত অনির্ব্বচনীয় কথা আভাসে বুঝাইতেছেন—
“সে কথা কহিবার নয়।”