অনন্তের সঙ্গে এই যোগ—ইহাতে বৈষ্ণব সাহিত্যের সর্ব্বত্র এক পাবনী-শক্তি বিদ্যমান। এই বৈশিষ্ট্য সাধারণতঃ পৃথিবীর অন্য কোন সাহিত্যে দৃষ্ট হয় না, বৈষ্ণবপদ রস ও রহস্যের সংমিশ্রণে অপূর্ব্ব হইয়াছে। আমরা যতই কেন ক্ষুদ্র না হই, অনন্তের সঙ্গে যোগ থাকাতে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনন্ত; মানুষ কোথায় যাইতেছে, এত হাঁটাহাটি—এত ক্লান্তি, এত অবসাদ, এত সুখ-দুঃখের পরিমাণ কি, তাহা আমরা বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু আমাদের এই দুর্গম পথে যে ভবিষ্যতের বহু দূর পর্য্যন্ত প্রসারিত এবং আমরা যে এই পথের ক্ষুদ্রতম একাংশ মাত্র পর্য্যটন করিতেছি, তাহা সকলেই উপলব্ধি করিতেছি। বৈষ্ণব কবিতার প্রতি পৃষ্ঠায় এমন দুই একটি ছত্র পাওয়া যাইবে, যাহাতে সেই অনস্ত পথের আভাস আছে, এই জন্য এই কবিতাগুলি রসিক পাঠকের যেমন উপভোগ্য, তাহা হইতে যাঁহারা বেশী কিছু চাহেন, সেই রূপ পাঠকেরও তেমনি বা ততোধিক উপভোগ্য। এই রস-ধারা মর্ত্ত্যের পথেই চলিয়াছে, কিন্তু মনে রাখিতে হইবে—ইহা বিষ্ণুপদচ্যুতা। জয়দেব লিখিয়াছেন,—
যদি হরি স্মরণে সরসং মনো-
যদি বিলাসকলাসু কুতুহলং।
মধুরকোমলকান্তপদাবলীঃ
শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্॥
যাঁহারা ভগবৎপ্রসঙ্গ শুনিতে চাহিবেন এবং যাঁহারা পার্থব প্রেমের আস্বাদ প্রত্যাশা করেন, সেই উভয়বিধ পাঠকের তৃপ্তির উপকরণ গীতগোবিন্দে আছে।
চণ্ডীদাস যখন নাম-জপের কথা বলিতেছেন, রাধাকে নীলাম্বরী শাড়ী ছাড়াইয়া গৈরিক বাস পরাইতেছেন, তাঁহাকে দিয়া উপবাস করাইতেছেন