পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৪৭

মনে পড়িলে তিনি আনন্দে সহিতেন। কিন্তু কানু যদি তাঁহার উপর বিরূপ হন, তবে তিনি কি করিবেন? রাধা বলিতেছেন,—

বঁধু, তুমি যদি মোরে নিদারুণ হও,
মরিব তোমার আগে, দাঁড়াইয়া রও। (চ)

যদি কেহ তাঁহার সম্বন্ধে ভাঙচি দেয়, তবে রাধা তাহাকে এই বলিয়া অভিসম্পাত দিতেন—

“এ হেন বঁধুরে মোর যে জন ভাঙ্গায়,
হাম নারী অবলার বধ লাগে তায়।” (চ)

কৃষ্ণ-হীনা রাধিকা ফুল-পল্লব-বিরহিত পুষ্পতরু নহে—ততোধিক পরিত্যক্তা—সূর্য্যান্তের পর চন্দ্রতারাহীন নীলাম্বর নহে, ততোধিক আঁধার—ইহা হইতে দুঃখ রাধার কল্পনাতীত, এজন্য রাধা বলিতেছেন, যে আমার এই সুখের ঘরে হানা দিবে—

“আমার হৃদয় যেমন করেছে,
    তেমতি হউক সে।” (চ)

ইহা হইতে কষ্ট আর নাই। সংসারের আধি-ব্যাধি, শোক, দুঃখ, মৃত্যু রাধা অবহেলায় সহিতে পারেন; কিন্তু কৃষ্ণপ্রেমবঞ্চিতা হইলে তিনি তিলার্দ্ধও সহিতে পারিবেন না, এইজন্য এই অভিশাপ তাঁহার অভিধানের সর্ব্বাপেক্ষা বড় অভিশাপ। কৃষ্ণকে একবার রাধা বলিয়াছিলেন, “আমার এই প্রেমের কষ্ট তুমি বুঝিবে কেমন করিয়া, কেমন করিয়াই বা তাহা তোমাকে বুঝাইব, আমি প্রার্থনা করি, যেন জন্মান্তরে আমি ‍কৃষ্ণ হই এবং তুমি রাধা হও, তোমার সঙ্গে প্রেম করিয়া আমি যেন ছাড়িয়া যাই, তখন তুমি বুঝিবে আমার কষ্ট কি?”

সাগরে যাইব কামনা করিব,
 সাধিব মনের সাধা।
মরিয়া হইব শ্রীনন্দের নন্দন,
 তোমারে করিব রাধা।