“ক্রুর, লম্পট, শঠ,”—এ সেই না চিনার জন্য, বিদ্যাপতির রাধা এই পদের শেষ ছত্রে আর্ত্ত স্বরে জিজ্ঞাসু হইয়াছেন:—
“মাধব, তুহু কৈছে কহবি মোর” তুমি বল তুমি কেমন? তুমি কে? এই চির-রহস্যময় বিশ্বের কারণস্বরূপ ভগবানের সঙ্গে লীলাচ্ছলে নানা অভিনয় করিয়াও যে একটা খোঁচার মত সন্দেহ মনে থাকয়া যায়—এই সন্দেহ, এই আশঙ্কা হইতেই মাথুরের উৎপত্তি।
আমি তো তাঁহাকে ভালবাসিয়াছি, সে তো বিন্দুর সিন্ধুকে ভালবাসা। আমি তাঁহাকে সমগ্রভাবে চাই—সেই যমুনাতীরকুঞ্জে যত অমৃতোপম কথা শুনিয়াছিলাম, বংশীধর “পরশিতে চাই তোমার চরণের ধূলি” বলিয়া আমার পায়ে ধরিয়া সেবা করিয়াছিলেন,—মাতৃরূপে, সখারূপে তিনি জীবকে সমগ্রভাবে ভালবাসার স্বপ্ন দেখাইয়া থাকেন। আমি যেন তাঁহার সব,
‘‘জ্বালিয়া উজ্জ্বল বাতি, জাগি পোহাইত রাতি,
তিল নাহি যায় পিয়া ঘুম,” (ব)
ধরিয়া দুখানি হাতে, কখন ধরয়ে মাথে,
ক্ষণে ধরে মাথার উপরে,
ক্ষণে পুলকিত হয়, ক্ষণে আঁখি মুদে রয়
বলরাম কি কহিতে পারে?”
“বিনি কাজে কত পুছে, কত না মুখানি মোছে”
“তুমি মোর প্রাণধন, তোমা বিনা নাহি আন,
কহে পিয়া গদ গদ ভাবে।” (ব)
কত ছন্দ-বন্ধে নানা কথা বিলয়া আমাকে ভুলাইয়াছিলেন, কত রাত্রি জাগিয়া অভিসারের পথে “পততি পতত্রে বিচলিত পত্রে” আমার পদক্ষেপ শুনিবার জন্য কাণ পাতিয়া প্রতীক্ষা করিয়াছেন, কত তিমির রজনীর মেঘের ঘটা, পিচ্ছিল বাটে অতি সম্ভর্পণে আসিয়া আমার আঙ্গিনার