নিজের রাজতুল্য স্বামীর ঘর ছাড়িয়া আমি যমুনার তীরে শ্যাম কুণ্ড—স্পৃষ্ট অনিলবাসিত কুঞ্জই গৃহ বলিয়া জানিয়াছি–—সে তোমারই জন্য, যাঁহারা আপন তাঁহাদিগকে পর মনে করিয়া তুমি একান্ত পর (পরাৎপর) তোমাকে আপন জ্ঞান করিয়াছি। দিনের বেলা ঘুমাইয়া কাটাইয়া দিনকে রাত্রি করিয়াছ, তোমার জন্য সারা রাত্রি কুঞ্জে কুঞ্জে ঘুরিয়া জাগরণ করিয়াছি, রাত্রিই আমার কাছে দিন হইয়াছে। এ তো তোমারই জন্য, হে মাধব, এত করিয়াও “বুঝিতে নারিনু বঁধু তোমার পীরিতি” তুমি আমার কাছে রহস্যই রহিয়া গিয়াছ।
এই সংশয় রাধার সমস্ত যন্ত্রণার মূলে। এজন্য একটা ‘হারাই’-‘হারাই’ ভাব চণ্ডীদাসের অনেক গানে দৃষ্ট হয়। যাহা অতি মূল্যবান্, তাহা লইয়া এজন্য লোকে সোয়ান্তি পায় না; আঁচলের গেরো খুলিয়া এজন্য সে বারংবার দেখে, তাহা কেউ লইয়া গেল কি না। বিশ্বনাথকে লইবার জন্য তো বিশ্বের সকলেই হাত পাতিয়া আছে।
এই সন্দেহ সর্ব্বত্রই গভীর প্রেমের লক্ষণ। অপোগণ্ড শিশুও তাহার মায়ের কোলে পাছে অপরে উঠে, এজন্য উৎকণ্ঠিত থাকে। চণ্ডীদাসের রাধা বলিতেছেন:—
“এই ভয় উঠে মনে, এই ভয় উঠে।
না জানি কানুর প্রেম তিলে যেন ছুটে।”
১০৷ সখী-সম্বোধনে
সখীদের কাছে রাধা কখনও বলিতেছেন, তোমরা আমার নিন্দার কথা শুনিয়া কষ্ট বোধ করিতেছ, কিন্তু কানুর কলঙ্ক—আমার অঙ্গের ভূষণ, এ নিন্দা আমার সৌভাগ্য:—
“কানু-পরিবাদ মনে ছিল সাধ,
সফল করিল বিধি।”