পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৬
পদাবলী-মাধুর্য্য

ভগ্ন কৃষ্ণ প্রস্তরের বাসুদেবকে কতকগুলি নরকঙ্কাল জড়াইয়া ছিল, অত্যাচারীরা বিগ্রহরক্ষাকল্পে যে সকল পুজারী প্রাণান্ত চেষ্টা করিয়াছিল, তাঁহাদের শবদেহ সহ মূর্ত্তি পুকুরে ফেলিয়া দিয়াছিল। মন্দির শ্রীবিগ্রহশূন্য হইলে কৃষ্ণ-মূর্ত্তি জগতের সর্ব্বস্থান হইতে ভক্তদের চোখে ধাঁধাঁ দিয়া তাঁহাদিগকে মুগ্ধ করিল, তাঁহাদের প্রাণের দরদে আঁকা কৃষ্ণমূর্ত্তি নব মেঘে বিরাজিত হইতেন, নীলাঞ্চলেও সেই রূপ প্রতিভাত হইত, কালো যমুনার জলে সে রূপ ঝলমল করিয়া উঠিত। ভক্ত-প্রাণে তাঁহাদের মন্দিরের আরাধ্য দেবমূর্ত্তি বড় দাগা দিয়া গিয়াছিল; এজন্য জগতের যেখানে কালো বর্ণ দেখিতেন, সেইখানে তাঁহারা প্রিয়তম দেবতাটিকে মনে করিতেন। চণ্ডীদাসের রাধা বলিতেছেন:—

“কালো জল ঢাল্‌তে সই কালো পড়ে মনে,
দিবানিশি দেখি কালা শয়নে স্বপনে।
কালো চুল এলাইয়া বেশ নাহি করি,
কালো অঞ্জন আমি নয়নে না পরি।””

বিগ্রহ বিচ্যুত হইয়া কৃষ্ণবর্ণ জগন্ময় পরিব্যপ্ত হইয়াছিল।

 সখীর প্রতি উক্তির কোন কোনটিতে প্রেমের সর্ব্বোচ্চ কথা উচ্চারিত হইয়াছে:—

“কানু সে আমার    জাতি, কুল, মান,
   এ দুটি নয়নের তারা,
আমার হিয়ায় ‍মাঝারে,   হিয়ার পুতলী,
   নিমিষে নিমিষে হারা।
তোরা কুলবতী    ভজ নিজ পতি,
   যার যেবা মনে লয়,
আমি ভাবিয়া দেখিলাম,   শ্যাম বধু বিনে
   গতি আর কেহ নয়।”