পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৬১

ভিখারী। শ্রাবণ মাসের ভরা বাদরের অজস্র বর্ষণশীল আকাশের কাছে কণিকামাত্র জলের প্রত্যাশা নাই, ইহাও কৃষ্ণের ঐশ্বর্য্যব্যঞ্জক। সুরতরু (কল্পবৃক্ষ) আমার কাছে বন্ধ্যা হইয়া রহিল, ধর্ম্ম-অর্থ-কাম মোক্ষের দাতা ভগবানকে কল্পতরু বলা হইয়াছে—তিনি কাম্য ফল প্রদান করেন। এখানেও রাধার প্রার্থীর বেশ, রাধা তাঁহার নিকট কাম্যবস্তুর সন্ধানে আসিয়াছেন, এখানে নিষ্কাম অহেতুক গোপী-প্রেমের আভাষ নাই। শেষ ছত্রে স্পষ্ট করিয়া বলা হইয়াছে—সর্ব্ব শক্তিমান, সর্ব্ব-ইষ্ট-প্রদায়ী ভগবানকে সেবা করিয়া কোনই ফল পাওয়া গেল না, কবি এ রহস্যের সমাধান করিতে পারিতেছেন না।

 কিন্তু কৃষ্ণ যতই বড় হউন না কেন, গোপী তাঁহার বিরাট্‌ রূপ দেখিতে চায় না, তাহারা তাহাকে পঞ্চ রসের মধ্য দিয়া দেখিতে চায়; মাতা রূপে তিনি যেমন আমারই মা, স্ত্রীরূপে তিনি যেমন আমারই স্ত্রী, সেই রূপ তিনি আমারই হইয়া আসিলে, আমি তাঁহার নাগাল পাইতে পারি। তিনি অণুর কাছে সম্পূর্ণরূপে অণু হইয়া ধরা দেন, ব্যবধান থাকিলে গলাগলি ভাব হয় না, বৈষ্ণব প্রেমের আদর্শ ছোট ও খর্ব্ব হইয়া যায়।

 চণ্ডীদাস বলিয়াছেন,

‘‘তোমারই গরবে গরবিনী হাম, রূপসী তোমার রূপে’’

 এই ছত্র কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার তন্ময়ত্ব-জ্ঞাপক। তাঁহার রূপ, গুণ, সকলই কৃষ্ণ হইতে পাওয়া। অগ্নির সঙ্গে তাপের, চন্দ্রের সহিত জ্যোৎস্নার পরস্পরে যে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের তাহাই; রাধা কৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি।

 রূপের স্পৃহা, দেহের সঙ্গ-সুখ, বাহিরের সেবা-স্তুতি, হোম, যাগ, যজ্ঞ, বৈধী ভক্তির সমস্ত আয়োজন মাথুরে লুপ্ত। জগন্নাথ বিগ্রহ অত্যাচারীরা