গাঁথিয়া গলায় পরিত এবং যশোদার হাতে ননী মাখন খাইত—সেই পাড়াগেঁয়ে মোড়লের ছেলে হঠাৎ আবু হোসেনের মত একদিনের মধ্যে সমস্ত মথুরামণ্ডলের রাজ্যটা পাইল। আর্য্যাবর্ত্তের মধ্যে এত বড় সাম্রাজ্য আর কোথাও ছিল না। যাহাকে বলাইদা একটা শিঙা ফুকাইয়া “কাক্কা কানাইয়া” বলিয়া ডাকিলে সে দাদার পিছনে পিছনে ছুটিত, সখাদের উচ্ছিষ্ট খাইত, সখারা দ্বন্দ্ব করিয়া যাহাকে লাথি মারিত কিংবা খেলার সময়ে ঘাড়ে চড়িয়া বসিত, যে গয়লা-মেয়েদের সঙ্গে লুকাচুরি খেলিত—সেই ছোঁড়াটা এখন রাজরাজেশ্বর—নয় মহাল পাড়ি দিয়া সপ্ততল অট্টালিকায় সে এখন বাস করে; শত শত রক্ষী সোণার লাঠী হাতে করিয়া তাহার মহালে মহালে পাহারা দেয়: ইন্দ্র, চন্দ্র, বরুণ, এমন কি ব্রহ্মাও তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিয়া এতেলা দিয়া প্রতীক্ষা করেন। বৃন্দা যখন কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিল, তখন মথুরাবাসিনীরা টিটকারী দিয়া তাহাকে বলিয়াছিল—
‘‘সপ্ততল ঘর, উপরে সো বৈঠত, তাহা কাঁহে যাওব নারী’’
প্রভাস-যজ্ঞে নন্দ উপানন্দ, এমন কি স্বয়ং মা যশোদা দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া প্রহরীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হইয়া যাঁহার দরবারে প্রবেশের পথ খুঁজিয়া পান নাই, যাঁহার কথা বলিতে যাইয়া রাধিকা কাঁদিয়া বলিয়াছেন,
‘‘আমরা গ্রাম্য গোপবালিকা, সবহ পশুপালিকা,
আহিরিণী কুরূপিনী—আমরা কৃষ্ণসেবার কিবা জানি।
মথুরানগর-যোষিতা, সবহ তারা পণ্ডিতা,
তারা রূপ-গুণে বেঁধেছে গো,
এই রাজকুল সম্ভবা ষড়-রসজ্ঞা মথুরাবাসিনীদের দ্বারা তিনি বেষ্টিতা।
‘‘তাবৎ অলি গুঞ্জরে, যাই ফুল ধুতুরে,
যাবৎ মালতী নাহি ফুটে’’
এখন আর তিনি এখানে ফিরিবেন কেন?