লক্ষ্যের একতম লক্ষ্য, সকল আনন্দের সেরা আনন্দ, সকল আশ্রয়ের শেষ আশ্রয় ভগবানকে পাইয়া, তাঁহাকে হারানো, এ যে কত বড় কষ্ট,তাহা বৈষ্ণব কবিরা অশ্রুর অক্ষরে লিখিয়া রাখিয়াছেন।
মাথুরের আর একটি গান, এখানে উদ্ধৃত করিব—
‘‘শীতল তছু অঙ্গ পরশ-রস-লালসে,
করিলু ধরম-গুণ নাশে।
সে যদি মোহে তেজল, কি কাজ ছায় জীবনে
আনহ সখি গরল করু গ্রাসে।
প্রাণাধিকা লো সজনি কাঁহে তোরা রোয়সি,
মরিলে তোরা করবি এক কাজে।
আমায় নীরে নাহি ডারবি, অনলে নাহি দাহবি,
রাখবি তনু এই ব্রজমাঝে।
হামারি দুন বাহু ধরি, সুদৃঢ় করি বাঁধবি,
শ্যাম-রুচি-তরু-তমাল-ডালে।
প্রতি দিবস শর্ব্বরী, অবশি সেথা আসবি,
সময় বুঝি তোরা সকলে মিলে।
(হামারি) ললাট-হৃদি-বাহুমুলে শ্যাম-নাম লিখবি,
তুলসী-দাম দেওবি গলে।
(হামারি) শ্রবণ মূলে শ্যাম নাম কহবি।” ইত্যাদি,
এই সকল গানে সাধারণ নায়ক-নায়িকার রাজ্য ছাড়িয়া প্রেম অধ্যাত্ম জগৎ ছুঁইয়াছে এবং বৈষ্ণবের ঈপ্সিত মৃত্যুর দিকে স্পষ্ট করিয়া ইশারা করিতেছে। ললাট, হৃদি, বাহুমূলে কৃষ্ণ-নামের ছাপ, গলায় তুলসীমালা দেওয়া ও মৃত্যুকালে কৃষ্ণনাম শোনা, ইহা তো মুমূর্ষ বৈষ্ণবেরই শেষ ইচ্ছা। কিন্তু অধ্যাত্মতত্ত্ব এখানে ধর্ম্মের জটিল রূপ ধরিয়া দেখা দেয় নাই, অতি শ্রুতিমধুর মর্ম্মস্পর্শী কবিত্বের অক্ষরে