পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৬৯

পরিকল্পনা। মথুরাবাসিনীর দর্পের উত্তর গোপী ঝঙ্কার দিয়া বলিতেছে “কিসের বড়াই করিস্ মথুরাবাসিনি! তোদের মণি মুক্ত-জহরৎ–—এসকলের মধ্যে ব্রজের একটা ধূলি-রেণুরও দাম নাই।”

 এইজন্যই সেই ধূলির জন্য সমন্ত ভারতবর্ষ বৃন্দাবনের দিকে ছুটিয়াছে, তাহারা মথুরার ঐশ্বর্য্য দেখিতে চায় না। এই রেণুর উপর শত শত মঠ, অট্টালিকা—(তাহাদের শীর্ষে সোণার কলস) উঠিয়াছে। আরও কতকাল ধরিয়া উঠিবে কে জানে! সেখানে যে প্রাণ-বঁধুর পদরজঃ আছে, তার চেয়ে মূল্য কাহার বেশী? কৃষ্ণ যখন তাঁহার সপ্ততল মন্দিরের চূড় হইতে গোপীমুখারবিন্দনিঃসৃত “জয় রাধে, শ্রীরাধে” বাণী শুনিলেন, তখন তিনি দ্রুতগতিতে নীচে ছুটিয়া আসিলেন—তাঁহার রাজদণ্ড, রাজপরিচ্ছদ, রাজমুকুট কোথায় পড়িয়া রহিল? তিনি পাগলের মত ছুটিয়া আসিয়া চীৎকার করিয়া বলিলেন “এ নাম কে শুনালে? মথুরার লোক তো সে নাম জানে না, তাহারা তো যশ-মান-ধনের কাঙ্গাল, তাহারা তো ও নাম জানে না! কে এই উষর মরুভূমির মধ্যে আমার কাণে অমৃত-তুল্য নাম শুনালে?” তখন তাঁহার ধড়া পরিবার অবকাশ হ’ল না, এক পায়ে পায়জামা অপর পায়ে ধড়ার অংশ, এক হাতে রাজদণ্ড, অপর হাত বাঁশী খুজিতেছে। উম্মত্ত বেশে তিনি রাধার কাছে যাইতে ছুটিয়াছেন।

 রাধা সখীদের মধ্যে কৃষ্ণ জয়ন্ময় ‘রাধা’ দেখিতেছেন, রাধাভাবে তিনি উদভ্রান্ত। পুরাণে কথিত আছে, এইরূপ ভাবাবেশে প্রহ্লাদ ব্যাঘ্রের গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি কি আমার পদ্ম-পলাশ-লোচন হরি?” কৃষ্ণ ললিতা সখীকে ধরিয়া উন্মত্ত ভাবে বলিলেন, “কই কই, প্রেমময়ি! পরশিয়ে অঙ্গ শীতল হই—আমি জ্বলে যে আছি, বহুদিন না দেখিয়ে আমি জ্বলে যে আছি”। ললিতা হাসিয়া, সরিয়া গিয়া বলিল, “এ কি কহে বঁধু,