জ্বালা উৎপন্ন করিত, পঞ্চবাণ বজ্রসারের মত ঠেকিত, আজ পাঁচবাণ স্থলে লক্ষবাণ পড়ুক, এক চন্দ্রের স্থলে লক্ষ চন্দ্র উদিত হউক, আজ যে শুভ মিলন-রাত্রি। কিছু পূর্ব্বে চণ্ডীদাস এইরূপ উপলক্ষে লিখিয়াছিলেন,
‘‘এখন গগনে উদয় করুক চন্দ,
মলয় পবন বহুক মন্দ,
কোকিলা আসিয়া করুক গান,
ভ্রমরা ধরুক মধুর তান।’’
চণ্ডীদারে এই সরল সুন্দর পদটি লইয়া বিদ্যাপতি তার উপর রং ফলাইতে চেষ্টা করিয়াছেন।
রাধার অবস্থা কৃষ্ণ-বিচ্ছেদে বর্ণনা করিতে যাইয়া কবি লিখিয়াছেন, “নয়নক সিঁদ গেও, বয়ানক হাস”—“ধরণী ধরিয়া ধনী কত বেরি বৈঠত, পুনতহি উঠই না পারা। কাতর দিঠি করি, চৌদিশ হেরি হেরি, নয়নে গলতি জল ধারা”—এই আসন্ন-মৃত্যু রাধা বিরহের নানা চক্রে, নানা দশায় পড়িয়া ‘আধতনু কালিন্দী-নীরে,’ অবস্থায় পৌছিয়াছিলেন–এইখানেই মাথুর ভাবের শেষ; কিন্তু বিরহে পুড়িয়া যে ছাই রহিল, গল্প-কথিত ফিনিক্সের মত তাহা হইতে রাধার হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেম নূতন অবয়ব ধরিয়া জন্ম পাইল। বাহিরে হারাইয়া তিনি তাহাকে মনের মধ্যে পাইলেন—ইহাই “ভাব-সম্মেলন”—বঙ্গীয় প্রেম-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কথা—নূতন আবিষ্কার।
কৃষ্ণ এইরূপে নূতনভাবে তাহার মনের বৃন্দাবনে আসিবেন, সেখানকার রাধাকুণ্ড, কামকুণ্ড, দ্বাদশবন ও শ্যামকুণ্ড, সকলই মনের, সে বৃন্দাবনের নাম নিত্য বৃন্দাবন—সেখানে কিছু হারায় না, তাহা পাওয়ার দেশ। সখীরা বিলাপ করিতেছিল, কিন্তু অকস্মাৎ রাধা মনে পুলক অনুভব করিলেন, হঠাৎ দূরাগত বংশী-রবের মত কে যেন মনের কাণে কাণে একটা শুভ সংবাদ দিয়া গেল। সে সংবাদ-বাহককে রাধা চিনেন