পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৬
পদাবলী-মাধুর্য্য

ওকি বারিধর কি গিরিধর, ওকি
নবীন মেঘের উদয় হ’ল।
নাকি মদন মোহন ঘরে এল!
ওকি ইন্দ্রধনু যায় দেখা—নব জলদের মাঝে,
নাকি চুড়ার উপর ময়ূর পাখা!
“ও কি বক শ্রেণী যায় চলে, নাকি মুক্তমালা দোলে গলে!
ওকি সৌদামিনী মেঘের গায়, নাকি পীত বসন দেখা যায়!
ওকি মেঘের গর্জ্জন শুনি, নাকি প্রাণনাথের বংশীধ্বনি।’’

 আকাশে উড্ডীন বলাকা-পংক্তি দেখিয়া তিনি কত বার ভুল করিয়াছেন, উহা তাঁহার প্রাণনাথের গলার মুক্তামালা; মেঘের অঙ্গে স্ফূরিত বিদ্যুদ্দাম দেখিয়া মনে করিয়াছেন, উহা তাঁহার বঁধুর অঙ্গের পীতবসন। “সখীরা আজ তোরা ভাল করিয়া দেখিয়া আয়,—সত্যই কি তিনি আসিয়াছেন?”

 ভাব-প্রবণতার প্রবল উচ্ছ্বাসে কাব্য উচ্ছৃঙ্খল হইয়া যায়, কবি উন্মত্ততার সম্মুখীন হন। রাধা আজ আনন্দ ও নিরানন্দের দ্বন্দ্বে সেই সন্ধিস্থলে দাঁড়াইয়াছেন, এই ভ্রান্তি মধুর ও কবিত্ব পূর্ণ।

 কৃষ্ণকমল এই যে চিত্র আঁকিয়াছেন, তাহা তাঁহার শুধু কল্পনা-জাত নহে। আশ্চর্য্যের বিষয়, এই ভ্রান্তির সমন্তই বাস্তব হইতে পাওয়া। চৈতন্য “বিজনে আলিঙ্গই তরুণ তমাল”’—(“তমালের বৃক্ষ এক নিকটে দেখিয়া, কৃষ্ণ বলি’ তারে যেয়ে ধরে জড়াইয়া”)—এবং মেঘকে কৃষ্ণভ্রমে যে সকল কাতরোক্তি করিয়াছেন, তাহা চৈতন্যচরিতামৃতাদি পুস্তকে পাওয়া যায়। সেই চৈতন্যচরিতামৃতের শেষ অঙ্কের পাগল গোরাকে কৃষ্ণকমল এইভাবে কাব্যপটে ধরিয়া রাখিয়াছেন; এই চিত্র স্বপ্ন ও জাগরণের সন্ধিস্থলে; যাঁহারা ইহার আভাষ পাইয়াছেন, তাঁহারা সেই স্বপ্নই চাহিবেন, জাগরণ চাহিবেন না।