সমস্ত সন্দেহের নিরসন হইয়াছে, কৃষ্ণ সত্যই আসিয়াছেন, তখন রাধা বলিতেছেন:—
‘‘বহুদিন পরে বঁধুয়া আইলে। দেখা না হইত মরণ হ’লে।’’
চণ্ডীদাসের এই পদ বুঝাইতে যাইয়া কৃষ্ণকমল বলিয়াছেন:—
‘‘একবার আসিয়া সমক্ষে, দেখিলে স্বচক্ষে,
(জান্তে) কত দুঃখে রক্ষে করেছি জীবন।
ভাল ভাল বঁধু, ভাল তে আছিলে,
ভাল সময় এসে ভালই দেখা দিলে—
আর ক্ষণেক পরে এলে,—দেখা হ’ত না,
তোমার বিরহে সবার হ’ত যে মরণ।’’
চণ্ডীদাসের রাধা বলিতেছেন:—
‘‘দুঃখিনীর দিন দুঃখেতে গেল,
তুমি তো মথুরায় ছিলে হে ভাল।
আমার এতেক সহিল অবলা ব’লে,
ফাটিয়া যাইত পাষাণ হ’লে।’’
কোমল জিনিষ অনেক সহিতে পারে, আঘাতে ভাঙ্গে না, যেমন কাদা। যে প্রতিরোধ করিতে চায়, সে না পারিলে ভাঙ্গিয়া যায়, যেরূপ পাষাণ। আমি অবলা বলিয়াই, এত দুঃখ সহিয়া বাঁচিয়া আছি।
‘‘সে সকল কথা রহুক দূরে,
আজ মদনমোহনে পেয়েছি ঘরে।’’
যত দুঃখ পাইয়াছি, তাহা বলিবার দরকার নাই; বলিতে গেলে আনন্দের দিনে, উৎসবের গৃহে বঁধুর নিষ্ঠুরতার কথা ইঙ্গিতে আসিবে—এজন্য রাধা বলিতেছেন, সে প্রসঙ্গ এখন থাকুক। “দুঃখিনীর দিন দুঃখেতে গেল, মথুরা নগরে ছিলে তো ভাল।”