পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৮৩

কানুর নাম শ্রবণই তাঁহার শ্রুতির মহার্ঘ অলঙ্কার—যোগিনীর কুণ্ডল; ভিতরে ও বাহিরে তিনি সম্পূর্ণরূপে কৃষ্ণের হইয়া বলিতেছেন:—

‘‘সবে বলে মোরে শ্যাম-সোহাগিনী, গৌরবে ভরল দে।
হামারি গরব তুহুঁ বাড়ায়লি, অব টুটায়ব কে?’’

 আর একটি পদে গৃহে থাকাকালীন তিনি যে কষ্ট পাইয়াছেন—তাহার ইতিহাস দিতেছেন—হে কৃষ্ণ, আমি স্ত্রীলোক, কি করিয়া তোমায় মনের দুঃখ বুঝাইব? আমার পা আছে, কিন্তু চলিবার সাধ্য নাই, কোন ছলে তোমার শ্রীমন্দিরের দিকে ‍পা বাড়াইলে লোকে টিট্‌কারী দেয়; আমার মুখ আছে, কিন্তু কিছু বলিবার সাধ্য নাই, এজন্যই লোকে স্ত্রীলোককে “অবোলা” বলে। এক স্থানে চণ্ডীদাস রাধিকার মুখে বলিয়াছেন—চোরের মা যেমন ফুকারিয়া কাঁদিতে পারে না, তাঁহার সেই অবস্থা। আমার চোখ আছে, কিন্তু নয়নাভিরাম মূর্ত্তি আমার দেখিবার সাধ্য নাই। (“নিশ্বাস ফেলিতে না দেয় ঘরে ননদিনী”) চোখ মেলিলে বলে—‘কি দেখ্‌ছ’; চোখের জল ফেলিলে বলে—‘কেন কাঁদ্‌ছ’। বঁধু, স্ত্রীলোকের মনের দুঃখ মনেই থাকে।

   ‘‘শুনহে চিকন কালা,
বলিব কি আর,    চরণে তোমার,
   অবলার যত জ্বালা!,
চরণ থাকিতে    না পারি চলিতে
   সদা যে পরের বশ,
কোন ছলবলে    তব কাছে এলে
   লোকে করে অপযশ!
বদন থাকিতে    না পারি বলিতে
   তেঁই সে ‘অবোলা’ নাম,
নয়ন থাকিতে     সদা দরশন
   না পেলেম নবীন শ্যম।
অবলার যত     দুঃখ প্রাণনাথ,
   সব থাকে মনে মনে।’’