পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৯০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৪
পদাবলী-মাধুর্য্য
৮৪

 চণ্ডীদাস কাব্যলোকের ঊর্দ্ধে—সরস্বতীর এলাকা ছাড়িয়া তিনি সরস্বতীনাথের রাজ্যে গিয়াছেন। এজন্য উপমা ও উৎপ্রেক্ষায় যেরূপ বিদ্যাপতির পদ ঝলমল, সে তুলনায় ইঁহার কবিতা কতকটা নিরাভরণ—তাহার যোগিনীর বেশ; কিন্তু মর্ম্মের মর্ম্মকথা তিনি যেরূপ আবেগে প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতে সর্ব্বত্যাগী আত্মবিস্মৃত প্রেমের মূর্ত্তি মহিমান্বিত হইয়া উঠিয়াছে। তাঁহার এক-একটি পদ হৃদয়ে ঘা দিয়া মর্ম্মের কথা টানিয়া বাহির করে। পরবর্ত্তী কবিরা তাঁহার পদগুলির মধ্যে আখর-যোজনা করিয়া সেগুলি সমৃদ্ধ করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন, তাঁহার পদে সেরূপ আখর-যোজনার অজস্র অবকাশ আছে। ধরুন বর্ষা-রজনীর একটি বিরহের পদ—ইহা স্বপ্নাধ্যায়-ভুক্ত।

 ‘‘আমি পরাণনাথেরে   স্বপনে দেখিলাম
   সে যে বসিয়া শিয়র পাশে।
 নাসার বেশর     পরশ করিয়া
   ঈষৎ মধুর হাসে।
 আমার মরমে পশিল লেহ,  হৃদয়ে লাগিল দেহ,
   শ্রবণে ভরল সেই বাণী,
 দেখিয়ে তাহার রীত,   যে করে আমার চিত,
   আমি কি করিব কুলের কামিনী!
(তাহে) অঙ্গ পরিমল,     সুগন্ধি চন্দন,
   কুঙ্কুম-কস্তুরী পারা।
 পরশ করিতে     রস উপজিল,
   জাগিয়া হইনু হারা।
(তখন) চাতক পাখীরে     চকিতে বাটুল
   মারিলে যেমত হয়,
 স্বপন ভাঙ্গিয়া     তেমতি হইল,
   দ্বিজ চণ্ডীদাসে কয়।’’