খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন। কিন্তু চণ্ডীদাস যখন ভাবে আবিষ্ট হইয়া যাইতেন, তখন গূঢ় অনুভূতির দরুণ বাজে কথা, এমন কি বক্তব্য বিষয় বুঝাইবার পক্ষে যাহা কতকটা দরকার, তাহাও তাহার বলিবার একান্ত অবসর হইত না।
‘‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে?’’
এ কথাটা রাধা স্পষ্টই কৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন। তাহার পরে যেন মুখ ফিরাইয়া সখীকে বলিতেছেন—
‘‘আঙ্গিনার মাঝে বঁধুয়া ভিজিছে, দেখে যে পরাণ ফাটে।’’
তারপর জনান্তিকে বলিতেছেন—
‘‘ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ, বিলম্বে বাহির হৈনু।’’
এবং আবার কৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন—
‘‘আহা মরি মরি সঙ্কেত করিয়া কত না যাতনা দিনু।’’
তারপর পুনশ্চ সখীর প্রতি—
“বঁধুর পীরিতি আরতি দেখিয়া, মোর মনে হেন করে,
কলঙ্কের ডালি মাথার করিয়া, অনল ভেজাই ঘরে।
আপনার দুঃখ, সুখ করি মানে, আমার দুঃখের দুঃখী,
চণ্ডীদাস কহে কানুর পীরিতি, শুনিয়া জগৎ সুখী।”
এই পদটিতে একটা প্রচ্ছন্ন নাট্যকৌশল উপলব্ধ হইবে। রাধা ঘুরিয়া ফিরিয়া বারংবার মুখ ফিরাইয়া যাহা বলিতেছেন, কবি যেন তাহা মানস-কর্ণে শুনিতেছেন এবং মানস চক্ষে সে দৃশ্য দেখিতেছেন; তিনি যাহা শুনিতেছেন বা দেখিতেছেন, তাহাই বলিয়া যাইতেছেন। আত্মবিস্মৃত কবি ভুলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার কথা শুনিবার জন্য বাহিরের লোক কাণ পাতিয়া আছে, তাহাদের জন্য পরিচয়ের ভূমিকাটার দরকার ছিল। এই সম্পূর্ণ আত্মস্থভাব শুধু মহাকবিদের