কুবেরের মুখে কথা সরিল না।
অনেকক্ষণ পরে সে বলিল, রাসুর কাম। সব্বোনাশ করব কইছিল না রাসু—রাসুর কাম।
কী করবা মাঝি?
কে জানে কী করিবে! বিপদে-আপদে মুখ চাহিবার একজন আছে কুবেরের, তার কাছে গিয়া দাঁড়াইবে। ঘাটে হােসেনের নৌকা বাঁধা আছে দেখিয়া কুবের একটু আশ্বস্ত হইল।
কপিলার চোখ মুছাইয়া দিল কুবের, বলিল, বাড়িত্ যা কপিলা।
তুমি কী করবা?
হােসেন মিয়ারে বিত্তান্ত কই গিয়া, দেখি স্যায় কী কয়।
আমি লগে যামু মাঝি।
হ, বাঁশের কঞ্চির মতাে অবাধ্য কপিলা। কোনােমতেই কুবের তাহাকে বাড়ি পাঠাইতে পারিল না। কুবেরের সঙ্গে সে হােসেন মিয়ার বাড়ি গেল।
হােসেনকে কিছু বলিতে হইল না, খবর সে আগেই শুনিয়াছে। লালচে দাড়ি মুঠা করিয়া ধরিয়া সে ভাবিতে ভাবিতে বলিল, ময়নাদ্বীপি যাবা কুবির? চুরি আমি সামাল দিমু।
আমি চুরি করি নাই মিয়া!
তা কি হােসেন মিয়া জানে না? কিন্তু চোরাই মাল যখন বাহির হইয়াছে কুবেরের ঘরে, চোরকে সেখানে মাল রাখিয়া আসিতে কেহ যখন দেখে নাই, কে বিশ্বাস করিবে কুবেরের কথা? বাহিরের কেহ শত্রুতা করিয়া রাখিয়া যাইতে পারে এমন কোনাে স্থানে মাল বাহির হয় নাই, একেবারে ঘরের মধ্যে লুকানাে অবস্থায় মাল পাওয়া গিয়াছে। তা ছাড়া গরিব নয় কুবের?
বিবর্ণ মুখে কুবের মাথা হেঁট করিয়া থাকে। ঘােমটার ভিতর হইতে সজল চোখে কপিলা তার দিকে তাকায়।
একজন মুনিষ তামাক সাজিয়া দিয়া যায় হােসেনকে। তামাক টানিতে টানিতে হােসেন জিজ্ঞাসা করে, যাবা ময়নাদ্বীপি?
ঘাড় নাড়িয়া কুবের সায় দেয়।
চোখ বুজিয়া হােসেন ব্যবস্থার কথা বলিয়া চলে! আজ এই রাত্রেই রওনা হইয়া যাক কুবের। স্ত্রী-পুত্রের জন্য ভাবনা নাই কুবেরের, হােসেন রহিল। পরে গােপি আর বঙ্কুর সঙ্গে ওদের সকলকে হােসেন ময়নাদ্বীপে পৌঁছাইয়া দিবে। কেন, কাঁদে কেন কুবের? ময়নাদ্বীপ তাে নিজের চোখে সে দেখিয়া আসিয়াছে, সেখানে গিয়া বাস করিতে হইবে বলিয়া কান্নার কী আছে?
তামাক শেষ করিয়া হােসেন উঠিল। বাহিরের একটা ঘরে সাতজন মুসলমান মাঝি