মিয়া যখন খাসির মাথার ব্যঞ্জন পাইলে ধন্য হইয়া যাইত, আজ যার তার রান্না ওসব কি আর সে খাইবে? শুধু না খাওয়া নয়, খাইতে বলিলে হয়তাে সে আজ অপমানই বােধ করিয়া বসিবে। তার চেয়ে আম যখন আছে, তাই দেওয়া ভালাে।
ঘরে গিয়া কুবের একটু অবাক হয়। চাটাইয়ে চিত হইয়া শুইয়া ইতিমধ্যেই হােসেন মিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। কুবের সন্তর্পণে মৃদু স্বরে একবার বলে, মিয়া বাই? সাড়া না পাইয়া ঠেলা দিয়া ঘুম ভাঙায় গােপির।
সিধুর ঠাঁই ব্যানুন আনছিলি গােপি?
ঘুমে আধমরা গােপি বলে, উঁহু?
উঁহু। আনতি কইয়া গেলাম না হারামজাদি?
বাহুমূলে কুবেরের জোর টিপুনিতে গােপি চমকিয়া সজাগ হইয়া বসে। বলে, আনতি গেছিলাম বাবা। দিল না। কইল, বিড়ালে সব খাইয়া গেছে গা।
বিড়ালে খাইয়া গেছে কইল, না?
গােপি সায় দিল; কুবের রাগে আগুন হইয়া বলিল, হালা জুয়াচ্চোর! র, বিয়ানে খাওয়ামুনে বিড়ালরে। হালা বজ্জাইত।
ছাড়া পাইবামাত্র গােপি ঢলিয়া পড়ে। ঘুম বােধ হয় আসে তাহার সঙ্গে সঙ্গেই। ঘরের যে কোণে জল পড়িতেছিল কুবের সেখানটা পরীক্ষা করিয়া দেখে। জল বাহির হইয়া যাইবার জন্য সেখানে সে একটি সরু নালি করিয়া দিয়াছিল, মাটি গলিয়া তাহা প্রায় বুজিয়া আসিয়াছে। জল জমিয়া ঘরের ভিতরের দিকে আগাইয়া আসিয়াছে অনেক দূর। হাত দিয়াই নালিটা সাফ করিয়া কুবের জল বাহির করিয়া দেয়। তারপর এক গভীর সমস্যার কথা ভাবিতে থাকে। ডিবরিতে বেশি তেল নাই। অল্পক্ষণের মধ্যেই নিভিয়া যাইবে। হােসেন মিয়াকে ডাকিয়া তুলিয়া আম খাওয়ার অনুরােধ এখন সে জানাইবে কি? বাদলা নামিয়া ঠাণ্ডা পড়িয়াছে। লােকটা আরামে গভীরভাবে ঘুমাইতেছে। ডাকিলে চটিবে না তাে?
ঘুমের মধ্যে হােসেন মিয়া পাশ ফিরিল। দ্যাখাে, হঠাৎ কুবের কী আবিষ্কার করিয়াছে। হোসেন মিয়ার লম্বা পাঞ্জাবির পকেট হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছে আনকোরা নতুন একটা পয়সা রাখিবার ব্যাগ! ব্যাগটা সে আজই মেলায় কিনিয়াছে সন্দেহ নাই। শখ করিয়া নতুন ব্যাগে কত টাকাপয়সা হােসেন মিয়া রাখিয়াছে কে জানে, ব্যাগটা ফুলিয়া মােটা হইয়া গিয়াছে।
কুবেরের দেহে কাঁপুনি ধরিয়া যায়। একমুঠা টাকা ও রেজকি হইতে প্রথমে সে একটা আধুলি ছাড়া আর কিছু লইতে সাহস পায় না। তারপর সে ভাবিয়া দেখে যে এতগুলি খুচরা রেজকি কি আর হােসেন মিয়া হিসাব করিয়া গুনিয়া গাঁথিয়া রাখিয়াছে? আরও একটা সিকি এবং একটা আনি সে বাহির করিয়া লয়।
ব্যাগটা হােসেন মিয়ার লম্বা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকাইয়া ফুঁ দিয়া সে ডিবরিটা নিবাইয়া দেয়। তখন একটা বড়াে ভয়ানক ব্যাপার ঘটিয়া যায়।
গােপি রুদ্ধ নিশ্বাসে বলে, বাবা!