কুবেরের দেহ শিরশির করে, মেরুদণ্ডটার ঠিক মাঝামাঝি।
চুপ যা গােপি, ঘুম যা।
আমারে কাইল পয়সা দিবা?
দিমু—চুপ যা, ঘুম যা গােপি।
গােপি আর কথা বলে না। অন্ধকারে দুহাত লম্বা ছােটো চাটাইটি সন্তর্পণে বিছাইয়া কুবের শুইয়া পড়ে।
৩
ভােরে আগে ঘুম ভাঙিল হােসেনের। কুবেরকে সে-ই ডাকিয়া তুলিল, চোখ মেলিয়াই কুবেরের কেন যেন হঠাৎ এক অকারণ ত্রাসে মন ভরিয়া গেল। কী হইয়াছে? বিপদ কিসের? হ, কাল রাত্রে সে হােসেন মিয়ার পয়সা চুরি করিয়াছিল। একদফা চোখ মিটমিট করিয়া কুবের আশ্বস্ত হইল। হােসেন মিয়াকে খাতির করিয়া বলিল, যান নাকি মিয়া বাই? খিদায় কাতর হইছেন সন্দ করি—রাইতে কিছু খান তাে নাই। এক কাম করেন, দুইগােটা আম খাইয়া যান।
প্রত্যুষে ঘুম ভাঙা মুখেও হােসেন মিয়া মৃদু মৃদু হাসিতে পারে।
খাওনের কথা থাও কুবির বাই! বাড়িত্ গিয়া খামু।
একটা প্রকাণ্ড হাই তুলিয়া বিড়ি ধরাইয়া হােসেন উঠিল। ঘুমন্ত গােপির দিকে এক নজর চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মাইয়ার বয়স কত, কুবির বাই?
নয় সন্দ কইরা থুইছি।
বিয়া দিবা না মাইয়ার?
হ। দিমু, কেরমে কেরমে দিমু।
পকেট হইতে হােসেন ব্যাগটা বাহির করিয়া খুলিল। দেখিয়া পাংশু হইয়া গেল কুবেরের মুখ। কিন্তু না, টাকাপয়সা গুনিয়া দেখিবার জন্য হােসেন ব্যাগ বাহির করে নাই। একটা সিকি বাছিয়া লইয়া সে কুবেরের হাতে দিল, বলিল, বাচ্চাগাে খাবার কিনা দিও কুবির বাই। বলিয়া ব্যাগটা আবার পকেটে রাখিয়া দিল। কুবের আত্মসম্বরণ তৎক্ষণাৎ। যে বিপদ ঘটিল না তার জন্য আর কেন বুক কাঁপিবে, মুখ শুকনো দেখাইবে? খুশিতে বেসামাল হইয়া সে জিজ্ঞাসাই করিয়া বসিল, ব্যাগটা নতুন দেখি? মেলায় কিনছেন বুঝি কাইল?
হােসেন বলিল, হ।
কথা কহিতে কহিতে দুজনে বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইল। এখন বৃষ্টি নাই কিন্তু মেঘে মেঘে প্রভাতের রূপ অস্বাভাবিক থমথমে। হােসেন একবার মুখ তুলিয়া আকাশের দিকে তাকাইল। ইয়া আল্লা, নামানাে আকাশের তলে কী দীনা এই পৃথিবী! ভিজিয়া চুপসিয়া চারিদিক সকাতর হইয়া আছে। হােসেনের মনের কোণে একটু স্বাভাবিক কবিত্ব ছিল, জীবনে