পাতা:পরাণ-মন্ডল ও অন্যান্য গল্প - জলধর সেন.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটু ঘুমাও, ভাের হইলেই তােমাকে জল খেতে দিব।” আমি বলিলাম, “দিদি, শাস্ত্র এমন নিৰ্দয়, নয়, বালিকা বিধবার জন্য এ কঠোর ব্যবস্থা শাস্ত্ৰে নাই, আমি বলছি শাস্ত্ৰে নাই ; তুমি —” আমার কথায় বাধা দিয়া দিদি বলিলেন, “হরচন্দ্র, এমন ব্যবস্থা ७ि না । একাদশীর দিনে ব্ৰাহ্মণের বিধবার জলগ্ৰহণ করিতে নাই,-“বাবার কাছে একথা শুনেছি—দাদামহাশয়ের কাছে একথা শুনেছি। চােদ বছর বয়সে সুরোকে কোলে নিয়ে বিধবা হয়ে এ ব্যবস্থা প্ৰতিপালন ਏ ? আমি বলিলাম, “তবে তাই হউক।--জল জল করে সুরমা মরুকতুমি আমি তাই দাড়িয়ে দেখি।” সুরমা আমার মুখের দিকে চাহিল, অতি ক্ষীণকণ্ঠে আর একবার বলিল, “মামা, জল-একটু জল”- তাহার পরই সে কণ্ঠ নীরব। পরদিন প্ৰাতঃকালে দেখিলাম তাহার। জ্বর হইয়াছে। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকিলাম। তিন চারি দিন ধরিয়া চিকিৎসা করাইলাম ; কিন্তু তাহাকে কোনও ক্রমে বঁাচাইতে পারিলাম না। সেই যে একাদশীর রাত্রে বলিয়াছিল, “জল-একটু জল-” তাহার পর আর সে মুখে একটি কথাও শুনিতে পাই নাই। ব্ৰাহ্মণের বিধবাদ্বাদশ বর্ষীয়া বালবিধবা—একবিন্দু জলের জন্য ছটফট করিতে করিতে প্ৰাণত্যাগ করিল। আমরা সে দৃশ্য দাড়াইয়া দেখিলাম, একটী কথাও বলিতে পারিলাম না। শাস্ত্রের আদেশ কি লজঘন করা যায় ? শাস্ত্রের আদেশ প্ৰতিপালিত হইল-অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালিত হইল-বার বৎসরের মেয়েকে নিরস্তু একাদশীর নিকট বলি দিতে হইল। দিদি দিন রাত কঁাদিতেছেন -কি বলিয়া তাহাকে প্ৰবোধ দিব। কাশী যাইতে বলিলাম ; তিনি আমাকে ফেলিয়া কোথাও যাইবেন না। v99