পাতা:পরাণ-মন্ডল ও অন্যান্য গল্প - জলধর সেন.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাবা ত স্পষ্টই বলিতেন যে, মানপূজা সন্ধ্যা গায়ত্রীতে যে সময় যায়, সে সময়টা পড়াশুনায় দিলে অধিক কাজ হয় ; লেখাপড়ার সময় ও সব সাজে না। লেখাপড়া শেষ কনিয়া, সংসারধৰ্ম্ম শেষ করিয়া, বৃদ্ধ বয়সে ধৰ্ম্মাচরণ, পূজা, অৰ্চনা, ব্ৰত, নিয়া’ প্ৰভৃতি পালন করিতে হয়। কিন্তু তাহার এ যুক্তি, এ উপদেশ আমি গহণ করিতে পারি নাই! যদি সন্ধ্যা গায়ত্রী না করিলাম, যদি ব্রাহ্মণোচিত আচার-ব্যবহার না রক্ষা করিলাম, তাহা হইলে যজ্ঞোপবীত ধারণ করিলাম কেন ? ব্রাহ্মণ বলিয়া পরিচয় দিই কেন ? একদিন আমার মাতুল আমাকে বলিয়াছিলেন, “নরেন, তুই যে এত বামুনগিরি করিস, তবে ইংরেজি লেখাপঢ়া করিস কেন ? মেচ্ছভাষা শিখিস কেন ?” আমি তখন প্ৰথম শ্রেণীতে পড়ি । আমি বলিলাম, “ভাষা আবার স্লেচ্ছ কি ? জ্ঞান কি সীমাবদ্ধ ? সকল ভাষাকেই জ্ঞানলাভের উপায় বিলিয়া লইতে হয়। আমি বাঙ্গালা পড়ি, সংস্কৃত পড়ি, ইংরেজিও পড়ি। আমি ব্ৰাহ্মণ, আমি আমার গাওঁী ছোট করিব কেন ? আমি ইংরেজি যতদূৱ পারি, পড়ব। তাতে আমার ব্ৰাহ্মণত্ব নষ্ট হইবে না।” এই সময় অামি মৎস্য মাংস আহার ত্যাগ করিলাম। বাবা মা ইহাতে ঘোর আপত্তি করিলেন ; মাছ মাংস আহার ত্যাগ করিলে আমার শরীর নষ্ট হইয়া যাইবে, আমি লেখা পড়া করিতে পারিব না, আমি ভয়ানক রোগে পড়বা। আমি তাঁহাদের আদেশ, উপদেশ গ্ৰহণ করিতে পারিলাম না। আমি ইচ্ছা করিয়া মৎস্য মাংস আহার ত্যাগ করি নাই ; কি জানি কেন আমিষ দ্রব্যের উপর আমার ঘোর বিতৃষ্ণ জন্মিয়াছিল। আমার মাতুল আমাকে ঠাট্টা করিয়া বলিতেন, “তুই যে দেখছি দৈত্যকুলে প্ৰহলাদ হলি ।” br