পাতা:পরাণ-মন্ডল ও অন্যান্য গল্প - জলধর সেন.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি সেদিন যেন যেন পাগলের মত হইয়া গিয়াছিলাম। সেই বেলা দশটা হইতে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত—আমি একটুও বসি নাই, কিছুই আহার করি নাই, জলবিন্দু পৰ্যন্তও গ্ৰহণ করি নাই, এক স্থানে স্থির হইয়া দাড়াইতেও পারি নাই ! হরিদ্ধার, মায়াপুর, কনখল, গঙ্গার অপর পারের পাহাড়ের উপর চণ্ডীর মন্দিয়, গ্রাম মাঠ -আমি সে সমস্ত স্থানে কেবল ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি, আর সকলের মুখের দিকে চাহিয়াছি! হায় অদৃষ্ট ! সারাদিন খুজি য়াও সেই মুখখানি দেখিতে পাইলাম না,-কেহই আমাকে জিজ্ঞাসাও করিল না যে, আমি এই লোকারণ্যের মধ্যে কি খুজিয়া বেড়াইতেছি। সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত অক্লান্তভাবে আমি ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি; কাহারও সহিত কথা পৰ্য্যন্ত বলি নাই। সন্ধ্যার সময় আমি একেবারে অবসন্ন হইয়া পড়িলাম, ক্ষুধা তৃষ্ণায় তখন আমাকে কাতর করিল ; যে পা দুইখানি হিমালয়ের কত চড়াই-উৎরাই আমাকে অনায়াসে পার করিয়া দিয়াছে, তাহারা আজ ক্লান্ত হইয়া পড়িল। আমি তখন মায়াপুরের নিকট একটা বাগানের মধ্যে এক বৃক্ষতলে একেবারে শুইয়া পড়িলাম। সেই বৃক্ষতলে অনেকগুলি সন্ন্যাসী ধুনী জ্বালাইয়া বসিয়া ছিলেন ; আমি একবার তঁহাদের মুখের দিকে চাহিলাম,-কিন্তু লছমনপ্ৰসাদের মত কাহাকেও সেখানে দেখিলাম না । বৃদ্ধের বস্ত্রাবাসে ফিরিয়া যাইবার তখন শক্তিও ছিল না, ইচ্ছাও ছিল না। ফিরিয়া গেলে লছমনপ্ৰসাদের স্ত্রী যখন সতৃষ্ণনয়নে আমার দিকে চাহিবেন, তখন, তঁহার প্রাণে আশার সঞ্চার করিবার জন্য, আমি কি বলিৰ ? আমাকে ত বলিতে হইবে যে, তাহার স্বামীকে খুজিয়া পাইলাম না! তখন সেই দেবীরূপিণী সতী যে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন, তাহা আমার সহ্য হইবে না। কোথাকার কে আমি,-কেমন করিয়া এক রাত্রিতে সহসা সেই হিন্দুস্থানী পরিবারের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হইয়া পড়িলাম!--এই 8V