বাহিরের লোক হয়ত পেট ভরিয়া সন্দেশ খাইয়া খুব জয়ধ্বনি করিল কিন্তু অন্তরের খবর যে জানে সে বুঝিল সব মাটি হইয়াছে! চোখ-ভোলানো চাতুরীতেই বেশি লোক মজে, কিন্তু, রূপের সঙ্গে রসের সাদৃশ্যবোধ যার আছে, চোখের আড়ে তাকাইলেই যে-লোক বুঝিতে পারে রসটি রূপের মধ্যে ঠিক আপনার চেহারা পাইয়াছে কিনা, সেই ত রসিক। বাতাস যেমন সূর্য্যের কিরণকে চারিদিকে ছড়াইয়া দিবার কাজ করে তেমনি গুণীর সৃষ্ট কলাসৌন্দর্য্যকে লোকালয়ের সর্ব্বত্র ছড়াইয়া দিবার ভার এই রসিকের উপর। কেননা যে ভরপূর করিয়া পাইয়াছে সে স্বভাবতই না দিয়া থাকিতে পারে না,—সে জানে তন্নষ্টং যন্ন দীয়তে। সর্ব্বত্র এবং সকল কালেই মানুষ এই মধ্যস্থ মানে! ইহাকে ভাবলোকের ব্যাঙ্কের কর্ত্তা—এরা নানাদিক হইতে নানা ডিপজিটের টাকা পায়—সে টাকা বদ্ধ করিয়া রাখিবার জন্য নহে;—সংসারে নানা কারবারে নানা লোক টাকা খাটাইতে চায়, তাহাদের নিজের মলধন যথেষ্ট নাই—এই ব্যাঙ্কার নহিলে তাহাদের কাজ বন্ধ।
এমনি করিয়া রূপের ভেদ প্রমাণে বাঁধা পড়িল, ভাবের বেগ লাবণ্যে সংযত হইল, ভাবের সঙ্গে রূপের সাদৃশ্য পটের উপর সুসম্পূর্ণ হইয়া ভিতরে বাহিরে পুরাপুরি মিল হইয়া গেল—এই ত সব চুকিল। ইহার পর আর বাকি রহিল কি?
কিন্তু আমাদের শিল্পশাস্ত্রের বচন এখনো যে ফুরাইল না! স্বয়ং দ্রৌপদীকে সে ছাড়াইয়া গেল। পাঁচ পার হইয়া যে ছয়ে আসিয়া ঠেকিল সেটা “বর্ণিকাভঙ্গং”। রঙের ভঙ্গিমা।
এইখানে বিষম খট্কা লাগিল। আমার পাশে এক গুণী বসিয়া আছেন তাঁরই কাছ হইতে এই শ্লোকটি পাইয়াছি। তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, রূপ, অর্থাৎ রেখার কারবার যেটা ষড়ঙ্গের গোড়াতেই আছে আর এই রঙের ভঙ্গী যেটা তার সকলের শেষে স্থান পাইল চিত্রকলায় এ দুটোর প্রাধান্য তুলনায় কার কত?