পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সোনার কাঠি

রূপকথায় আছে, রাক্ষসের যাদুতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে আছেন। যে পুরীতে আছেন সে সোনারপুরী, যে পালঙ্কে শুয়েচেন সে সোনার পলিঙ্ক; সোনা মাণিকের অলঙ্কারে তাঁর গা ভরা। কিন্তু কড়াকড় পাহারা, পাড়ে কোনো সুযোগে বাহিরের থেকে কেউ এসে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে দেয়! তাতে দোষ কি? দোষ এই যে, চেতনার অধিকার যে বড়। সচেতনকে যদি বলা যায় তুমি কেবল এইটুকুর মধ্যেই চিরকাল থাকবে, তার এক পা বাইরে যাবে না। তাহলে তার চৈতন্যকে অপমান করা হয়। ঘুম পাড়িয়ে রাখার সুবিধা এই যে তা’তে দেহেব প্রাণটা টিঁকে থাকে কিন্তু মনের বেগটা হয় একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, নয় সে অদ্ভুত স্বপ্নের পথহীন ও লক্ষাহীন অন্ধলোকে বিচরণ করে।

 আমাদের দেশের গীতিকলার দশাটা এই রকম। সে মোহরাক্ষণের হাতে পড়ে’ বহুকাল থেকে ঘুমিয়ে আছে। যে ঘরটুকু যে পালঙ্কটুকুর মধ্যে এই সুন্দরীর স্থিতি তার ঐশ্বর্য্যের সীমা নেই; চারিদিকে কারুকার্য্য, সে কত সূক্ষ্ম কত বিচিত্র! সেই চেড়ির দল, যাদের নাম ওস্তাদি, তাদের চোখে ঘুম নেই; তারা শত শত বছর ধরে’ সমস্ত আসা যাওয়ার পথ আগ্‌লে বসে’ আছে, পাছে বাহির থেকে কোনো আগন্তুক এসে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।

 তা’তে ফল হয়েছে এই যে, যে কাল‍্টা চল্‌চে রাজকন্যা তার গলায় মালা দিতে পারেনি, প্রতিদিনের নূতন নূতন ব্যবহারে তার