পাতা:পলাতকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ফাঁকি

পথের বাঁশি পায়ে পায়ে তারে যে আজ করেছে চঞ্চলা—
আনন্দে তাই এক হল তার পৌঁছনো আর চলা।
যাত্রীশালার দুয়ার খুলে আমায় বলে,
‘দেখো, দেখো, এক্কাগাড়ি কেমন চলে!
আর দেখেছ? বাছুরটি ঐ, আ ম’রে যাই, চিকন নধর দেহ—
মায়ের চোখে কী সুগভীর স্নেহ!
ঐ যেখানে দিঘির উচু পাড়ি—
সিসুগাছের তলাটিতে পাঁচিল-ঘেরা ছোট্ট বাড়ি
ঐ-যে রেলের কাছে—
ইস্টেশনের বাবু থাকে? আহা, ওরা কেমন সুখে আছে!’

যাত্রীঘরে বিছানাটা দিলেম পেতে;
বলে দিলেম, ‘বিনু, এবার চুপটি করে ঘুমোও আরামেতে।’
প্ল্যাট্‌ফরমে চেয়ার টেনে
পড়তে শুরু করে দিলেম ইংরেজি এক নভেল কিনে এনে।
গেল কত মালের গাড়ি, গেল প্যাসেঞ্জার,
ঘণ্টা তিনেক হয়ে গেল পার।
এমন সময় যাত্রীঘরের দ্বারের কাছে
বাহির হয়ে বললে বিনু, ‘কথা একটা আছে।’
ঘরে ঢুকে দেখি কে এক হিন্দুস্থানি মেয়ে
আমার মুখে চেয়ে
সেলাম করে বাহির হয়ে রইল ধরে বারান্দাটার থাম।

২৩