পাতা:পলাতকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কালো মেয়ে

হঠাৎ আমার চোখ পড়ে যায় উপরেতে—
মরচে-পড়া গরাদে ঐ, ভাঙা জানলাখানি,
বসে আছে পাশের বাড়ির কালো মেয়ে নন্দরানী।
মনে হয় যে, রোদের পরে বৃষ্টিভরা থমকে-যাওয়া মেঘে
ক্লান্ত পরান জুড়িয়ে গেল কালো পরশ লেগে।
আমি যে ওর হৃদয়খানি চোখের ’পরে স্পষ্ট দেখি আঁকা—
ও যেন জুঁইফুলের বাগান সন্ধ্যাছায়ায় ঢাকা;
একটুখানি চাঁদের রেখা কৃষ্ণপক্ষে স্তব্ধ নিশীথরাতে
কালো জলের গহন কিনারাতে;
লাজুক ভীরু ঝর্নাখানি ঝিরি ঝিরি
কালো পাথর বেয়ে বেয়ে লুকিয়ে ঝরে ধীরি ধীরি;
রাত-জাগা এক পাখি
মৃদু করুণ কাকুতি তার তারার মাঝে মিলায় থাকি থাকি;
ও যেন কোন্‌ ভোরের স্বপন কান্নাভরা
ঘন ঘুমের নীলাঞ্চলের বাঁধন দিয়ে ধরা।

রাখাল ছেলের সঙ্গে ব’সে বটের ছায়ে
ছেলেবেলায় বাঁশের বাঁশি বাজিয়েছিলেম গাঁয়ে।
সেই বাঁশিটির টান
ছুটির দিনে হঠাৎ কেমন আকুল করল প্রাণ।
আমি ছাড়া সকল ছেলেই গেছে যে যার দেশে;
একলা থাকি মেস্‌’এ।

৭৭