পাতা:পলাতকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা

সকাল-সাঁঝে মাঝে মাঝে বাজাই ঘরের কোণে
মেঠো গানের সুর যা ছিল মনে।

ঐ-যে ওদের কালো মেয়ে নন্দরানী—
যেমনতরো ওর ভাঙা ঐ জানলাখানি,
যেখানে ওর কালো চোখের তারা
কালো আকাশতলে দিশাহারা,
যেখানে ওর এলোচুলের স্তরে স্তরে
বাতাস এসে করত খেলা আলস-ভরে,
যেখানে ওর গভীর মনের নীরব কথাখানি
আপন দোসর খুঁজে পেত আলোর নীরব বাণী,
তেমনি আমার বাঁশের বাঁশি আপন-ভোলা,
চার দিকে মোর চাপা দেয়াল, ঐ বাঁশিটি আমার জানলা খোলা।
ঐখানেতেই গুটিকয়েক তান
ঐ মেয়েটির সঙ্গে আমার ঘুচিয়ে দিত অসীম ব্যবধান।
এ সংসারে অচেনাদের ছায়ার মতন আনাগোনা,
কেবল বাঁশির সুরের দেশে দুই অজানার রইল জানাশোনা।
যে কথাটা কান্না হয়ে বোবার মতন ঘুরে বেড়ায় বুকে
উঠল ফুটে বাঁশির মুখে।
বাঁশির ধারেই একটু আলো, একটুখানি হাওয়া,
যে পাওয়াটি যায় না দেখা স্পৰ্শ-অতীত একটুকু সেই পাওয়া।

৭৮