নিষেধবাক্য রমেশের স্মরণ ছিল না; তাই সে সোজা ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল এবং রমাকে তদবস্থায় দেখিয়া নিঃশব্দে অপেক্ষা করিতেছিল; দুজনের মাসখানেক পরে দেখা।
রমেশ কহিল,—“তুমি নিশ্চয়ই সমস্ত শুনেচ। জল বা’র ক’রে দেবার জন্যে তোমার মত নিতে এসেচি।” রমার বিস্ময়ের ভাব কাটিয়া গেলে, সে মাথায় আঁচল তুলিয়া দিয়া কহিল,—“সে কেমন ক’রে হবে? তা’ ছাড়া বড়দার মত নেই।” “নেই জানি। তাঁর একলার অমতে কিছুই আসে যায় না।” রমা একটুখানি ভাবিয়া কহিল,—“জল বা’র ক’রে দেওয়া উচিত বটে; কিন্তু, মাছ আট্কে রাখার কি বন্দোবস্ত কর্বেন?” রমেশ কহিল,—“অত জলে কোন বন্দোবস্ত হওয়া সম্ভব নয়। এ বছর সে টাকাটা আমাদের ক্ষতি স্বীকার কর্তেই হবে। না হ’লে গ্রাম মারা যায়।” রমা চুপ করিয়া রহিল। রমেশ কহিল,—“তা হ’লে অনুমতি দিলে?” রমা মৃদুকণ্ঠে কহিল,—“না। অত টাকা আমি লোকসান কর্তে পার্ব না।” রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। সে কিছুতেই এরূপ উত্তর আশা করে নাই। বরং, কেমন করিয়া তাহার যেন নিশ্চিত ধারণা জন্মাইয়াছিল, তাহার একান্ত অনুরোধ রমা কিছুতেই প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে না। রমা মুখ না তুলিয়াই, বোধ করি, রমেশের অবস্থাটা অনুভব করিল। কহিল,—“তা’ ছাড়া, বিষয় আমার ভাইয়ের, আমি অভিভাভক মাত্র।” রমেশ কহিল, “না, অর্দ্ধেক তোমার।”