বেশী টের পাইয়াছিল, যে দিন সন্ধ্যার অন্ধকারে রমার সমস্ত সম্বন্ধ সে একেবারে ভূমিসাৎ করিয়া দিয়া চলিয়া আসিয়াছিল। তৎপরে সেই নিদারুণ রাত্রির ঘটনার পর হইতে রমার দিক্টাই একেবারে রমেশের কাছে মহামরুর ন্যায় শূন্য ধূ ধূ করিতেছিল। কিন্তু, সে যে তাহার সমস্ত কাজ-কর্ম্ম, শোয়া-বসা, এমন কি চিন্তা, অধ্যয়ন পর্য্যন্ত এমন বিস্বাদ করিয়া দিবে, তাহা রমেশ কল্পনাও করে নাই। তাহাতে গৃহ-বিচ্ছেদ এবং সর্ব্বব্যাপী অনাত্মীয়তায় প্রাণ যখন তাহার এক মূহুর্ত্তও আর গ্রামের মধ্যে তিষ্ঠিতে চাহিতেছিল না, তখন নিম্নলিখিত ঘটনায় সে আর একবার সোজা হইয়া বসিল।
খালের ওপারে পিরপুর গ্রামেই তাহাদেরই জমিদারী। এখানে মুসলমানের সংখ্যাই অধিক। একদিন তাহারা দল বাঁধিয়া, রমেশের কাছে উপস্থিত হইল; এই বলিয়া নালিশ জানাইল যে, যদিচ তাহারা তাঁহাদেরই প্রজা, অথচ তাহাদের ছেলেপিলেকে মুসলমান বলিয়া গ্রামের স্কুলে ভর্ত্তি হইতে দেওয়া হয় না। কয়েকবার চেষ্টা করিয়া তাহারা বিফলমনোরথ হইয়াছে, মাষ্টার মহাশয়রা কোন মতেই তাহাদের ছেলেদের গ্রহণ করেন না। রমেশ বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হইয়া কহিল,—“এমন অন্যায় অত্যাচার ত কখনও শুনি নাই? তোমাদের ছেলেদের আজই লইয়া আইস; আমি নিজে দাঁড়াইয়া থাকিয়া ভর্ত্তি করিয়া দিব।” তাহারা কহিল,—“যদিচ, তাহারা প্রজা বটে, কিন্তু, খাজনা দিয়াই জমি ভোগ করে। সে জন্য হিঁদুর মত জমিদারকে