বর্ষা শেষ হইয়া আগামী পূজার আনন্দ এবং ম্যালেরিয়াভীতি বাঙ্লার পল্লী-জননীর আকাশে, বাতাসে এবং আলোকে উঁকি-ঝুঁকি মারিতে লাগিল। রমেশও জ্বরে পড়িল। গত বৎসর এই রাক্ষসীর আক্রমণকে সে উপেক্ষা করিয়াছিল; কিন্তু, এ বৎসর আর পারিল না। তিন দিন জ্বরভোগের পর আজ সকালে উঠিয়া, খুব খানিকটা কুইনিন্ গিলিয়া লইয়া জানালার বাহিরে পীতাভ-রৌদ্রের পানে চাহিয়া ভাবিতেছিল, গ্রামের এই সমস্ত অনাবশ্যক ডোবা ও জঙ্গলের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে সচেতন করা সম্ভব কি না। এই তিনদিন মাত্র জ্বরভোগ করিয়াই সে স্পষ্ট বুঝিয়াছিল, যা হৌক, কিছু একটা করিতেই হইবে। মানুষ হইয়া সে যদি নিশ্চেষ্টভাবে থাকিয়া প্রতি বৎসর, মাসের পর মাস, মানুষকে এই রোগভোগ করিতে দেয়, ভগবান্ তাহাকে ক্ষমা করিবেন না। কয়েকদিন পূর্ব্বে এই প্রসঙ্গ আলোচনা করিয়া সে এইটুকু বুঝিয়াছিল, ইহার ভীষণ অপকারিতা সম্বন্ধে গ্রামের লোকেরা যে একেবারেই অজ্ঞ, তাহা নহে; কিন্তু, পরের ডোবা বুজাইয়া এবং পরের জমির জঙ্গল কাটিয়া, কেহই ঘরের খাইয়া বনের মহিষ তাড়াইয়া বেড়াইতে রাজী নহে। যাহার নিজের ডোবা ও জঙ্গল আছে, সে এই বলিয়া তর্ক করে যে, এ সকল তাহার নিজের কৃত নহে—বাপ পিতামহের দিন হইতেই আছে। সুতরাং যাহাদের গরজ,