বিহ্বলের মত চাহিয়া রহিল। রমেশ পুনর্ব্বার যখন নিজের বক্তব্য ভাল করিয়া বুঝাইয়া কহিল এবং সে যে তামাসা করিতেছে না, তা নিঃসন্দেহে যখন বুঝা গেল, তখন অকস্মাৎ ভৈরব ছুটিয়া আসিয়া পাগলের ন্যায় রমেশের দুই পা চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিয়া, চেঁচাইয়া, আশীর্ব্বাদ করিয়া, এমন কাণ্ড করিয়া তুলিল যে, রমেশের অপেক্ষা অল্পবলশালী লোকের পক্ষে নিজেকে মুক্ত করিয়া লওয়া সেদিন একটা কঠিন কাজ হইত। কথাটা গ্রামময় প্রচারিত হইতে বিলম্ব ঘটিল না। সকলেই বুঝিল, বেণী এবং গোবিন্দ এবার সহজে নিষ্কৃতি পাইবে না। ছোটবাবু যে তাঁহার চির-শত্রুকে হাতে পাইবার জন্যই এত টাকা হাতছাড়া করিয়াছে, তাহা সকলেই বলাবলি করিতে লাগিল। কিন্তু, এ কথা কাহারও কল্পনা করাও সম্ভবপর ছিল না যে, দুর্ব্বল ভৈরবের পরিবর্ত্তে ভগবান্ তাহারই মাথার উপর এই গভীর দুষ্কৃতির গুরুভার তুলিয়া দিলেন, যে তাহা স্বচ্ছন্দে বহিতে পারিবে।
তারপর মাসখানেক গত হইয়াছে। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে মনে মনে যুদ্ধঘোষণা করিয়া রমেশ এই একটা মাস তাহার যন্ত্রতন্ত্র লইয়া এম্নি উৎসাহের সহিত নানাস্থানে মাপ-জোপ করিয়া ফিরিতেছিল যে, আগামী কালই যে ভৈরবের মকর্দ্দমা, তাহা প্রায় ভুলিয়াই গিয়াছিল। আজ সন্ধ্যার প্রাক্কালে অকস্মাৎ সে কথা মনে পড়িয়া গেল, রসুনচৌকির সানাইয়ের সুরে। চাকরের কাছে সংবাদ পাইয়া রমেশ আশ্চর্য্য হইয়া গেল যে,