পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/১৩৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লী-সমাজ
১৩৪


আজ ভৈরব আচার্য্যের দৌহিত্রের অন্নপ্রাশন। অথচ সে ত কিছুই জানে না। শুনিতে পাইল, ভৈরব আয়োজন মন্দ করে নাই। গ্রামশুদ্ধ সমস্ত লোককেই নিমন্ত্রণ করিয়াছে; কিন্তু, রমেশকে কেহ নিমন্ত্রণ করিতে আসিয়াছিল কি না সে খবর বাড়ীর কেহই দিতে পারিল না। শুধু তাই নয়। তাহার স্মরণ হইল, এত বড় একটা মামলা ভৈরবের মাথার উপর আসন্ন হইয়া থাকা সত্ত্বেও সে প্রায় কুড়িপঁচিশ দিনের মধ্যে একবার সাক্ষাৎ পর্য্যন্ত করিতে আসে নাই! ব্যাপার কি! কিন্তু, এমন কথা তাহার মনে উদয় হইয়াও হইল না যে, সংসারের সমস্ত লোকের মধ্যে ভৈরব তাহাকেই বাদ দিতে পারে। তাই নিজের এই অদ্ভুত আশঙ্কায় নিজেই লজ্জিত হইয়া, রমেশ তখনই একটা চাদর কাঁধে ফেলিয়া একেবারে সোজা আচার্য্য-বাড়ীর উদ্দেশে বাহির হইয়া পড়িল। বাহির হইতেই দেখিতে পাইল, বেড়ার ধারে দুই-তিনটা গ্রামের কুকুর জড় হইয়া, এঁটো কলাপাত লইয়া বিবাদ করিতেছে এবং অনতিদূরে রসুনচৌকি-ওয়ালারা আগুন জ্বালাইয়া তামাক খাইতেছে এবং বাদ্যভাণ্ড উত্তপ্ত করিতেছে। ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, উঠানে শতছিদ্রযুক্ত সামিয়ানা খাটানো এবং সমস্ত গ্রামের সম্বল পাঁচছয়টা কেরোসিনের বহু পুরাতন বাতি মুখুয্যে ও ঘোষালবাটী হইতে চাহিয়া আনিয়া জ্বালা হইয়াছে। তাহারা স্বপ্ন-আলোক এবং অপর্য্যাপ্ত ধূম উদ্গিরণ করিয়া সমস্ত স্থানটাকে দুর্গন্ধে পরিপূর্ণ করিয়া দিয়াছে।