করে নাই, তাহার এই কাজটাকেই প্রশংসার চক্ষে দেখিতেছে।
“হা, ভগবান!” সে একটা চৌকির উপর বসিয়া পড়িয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিল,—“এ কৃতঘ্ন জাতের, এ মহাপাতকের প্রায়শ্চিত্ত হবে কিসে! এত বড় নিষ্ঠুর অপমান কি ভগবান্ তুমিই ক্ষমা করতে পার্বে?”
এমনি একটা আশঙ্কা যে রমেশের মাথায় একেবারেই আসে নাই, তাহা নহে। তথাপি, পরদিন সন্ধ্যার সময়ে গোপাল সরকার সদর হইতে ফিরিয়া আসিয়া যখন সত্য সত্যই জানাইল যে, ভৈরব আচার্য্য তাহাদের মাথার উপরেই কাঁঠাল ভাঙিয়া ভক্ষণ করিয়াছে, অর্থাৎ সে মকদ্দমায় হাজির হয় নাই, এবং তাহা এক-তরফা হইয়া ডিস্মিস হইয়া গিয়া তাহাদের প্রদত্ত জমা টাকাটা বেণী প্রভৃতির হস্তগত হইয়াছে, তখন, একমুহূর্ত্তেই রমেশের ক্রোধের শিখা বিদ্যুদ্বেগে তাহার পদতল হইতে ব্রহ্মরন্ধ্র পর্য্যন্ত জ্বলিয়া উঠিল। সে দিন ইহাদের জাল ও জুয়াচুরি দমন করিতে যে মিথ্যাঋণ সে ভৈরবের হইয়া জমা দিয়াছিল, মহাপাপিষ্ঠ ভৈরব তাহার দ্বারাই নিজের মাথা বাঁচাইয়া লইয়া পুনরায় বেণীর সহিতই সখ্য স্থাপন করিয়াছে। তাহার এই কৃতঘ্নতা কল্যকার অপমানকেও বহু ঊর্দ্ধে ছাপাইয়া আজ রমেশের মাথার ভিতরে প্রজ্বলিত হইতে লাগিল।