যাও,—যাও এ দেশ থেকে।” কিছুক্ষণ পর্য্যন্ত উভয়েই নীরব হইয়া রহিল। ইতিপূর্ব্বে যেখানে, যে কোন অবস্থায় হৌক, রমাকে দেখিলেই রমেশের বুকের রক্ত অশান্ত হইয়া উঠিত। মনে মনে শত যুক্তি প্রয়োগ করিয়া, নিজের অন্তরকে সহস্র কটূক্তি করিয়াও তাহাকে শান্ত করিতে পারিত না। হৃদয়ের এই নীরব বিরুদ্ধতায় সে দুঃখ পাইত, লজ্জা অনুভব করিত, ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিত; কিন্তু কিছুতেই তাহাকে বশে আনিতে পারিত না। বিশেষ করিয়া আজ এইমাত্র নিজের গৃহের মধ্যে সেই রমাকে অকস্মাৎ একাকিনী উপস্থিত হইতে দেখিয়া কল্যকার কথা স্মরণ করিয়াই তাহার হৃদয়-চাঞ্চল্য একেবারে উদ্দাম হইয়া উঠিয়াছিল। রমার শেষ কথায় এতদিন পরে আজ সেই হৃদয় স্থির হইল। রমার ভয়-ব্যাকুল নির্ব্বন্ধতায় অখণ্ড স্বার্থপরতার চেহারা এতই সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল যে, তাহার অন্ধ হৃদয়েরও আজ চোখ খুলিয়া গেল। রমেশ গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল,—“আচ্ছা, তাই হবে। কিন্তু আজ আর সময় নেই। কারণ, আমার পালাবার হেতুটা যত বড়ই তোমার কাছে হোক্, আজ রাত্রিটা আমার কাছে তার চেয়েও গুরুতর। তোমার দাসীকে ডাকো, আমাকে এখনই বা’র হ’তে হবে।” রমা আস্তে আস্তে বলিল,—“আজ কি কোনমতেই যাওয়া হ’তে পারে না?” “না। তোমার দাসী গেল কোথায়?” “কেউ আমার সঙ্গে আসেনি।” রমেশ অবাক হইয়া বলিল,—“সে কি কথা! এখানে একা