মধ্যাহ্ন অপরাহ্নে গড়াইয়া, তাহাও শেষ হইতে বসিয়াছে। আকাশে সপ্তমীর খণ্ড-চন্দ্র পরিস্ফুট হইয়া উঠিতে লাগিল; কিন্তু মুখুয্যে-বাড়ীর মস্ত উঠান জনকয়েক ভদ্রলোক ব্যতীত একেবারে শূন্য, খাঁ খাঁ করিতেছে। বাড়ীর ভিতরে অন্নের বিরাট স্তূপ ক্রমে জমাট বাঁধিয়া কঠিন হইতে লাগিল, ব্যঞ্জনের রাশি শুকাইয়া বিবর্ণ হইয়া উঠিতে লাগিল, কিন্তু এখন পর্য্যন্ত একজন চাষাও মায়ের প্রসাদ পাইতে বাড়ীতে পা দিল না। ‘ইস্! এত আহার্য্য-পেয় নষ্ট করিয়া দিতেছে, দেশের ছোট লোকের দল? এত বড় স্পর্দ্ধা!' বেণী হুঁকা হাতে একবার ভিতরে, একবার বাহিরে, হাঁকাহাঁকি দাপাদাপি করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন;—“ব্যাটাদের শেখাবো—চাল কেটে তুলে দেব,—এমন ক’র্ব, তেমন ক’র্ব ইত্যাদি।” গোবিন্দ, ধর্ম্মদাস, হালদার প্রভৃতি এঁরা রুষ্টমুখে অবিশ্রান্ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া আন্দাজ করিতে লাগিলেন, কোন্ শালার কারসাজিতে এই কাণ্ডটা ঘটিয়াছে! হিন্দু মুসলমান একমত হইয়াছে, এও ত বড় আশ্চর্য্য! এদিকে অন্দরে মাসী ত একেবারে দুর্ব্বার হইয়া উঠিয়াছেন। সেও এক মহামারী ব্যাপার! এই তুমুল হাঙ্গামার মধ্যে শুধু একজন নীরব হইয়া আছে—সে নিজে রমা। একটি কথাও সে কাহারো বিরুদ্ধে কহে নাই,—কাহাকেও দোষ দেয় নাই,—একটা আক্ষেপ বা অভিযোগের কণামাত্র বাক্যও এখন পর্য্যন্ত তাহার মুখ দিয়া বাহির হয় নাই। এ কি সেই রমা? সে যে অতিশয় পীড়িত,