গভীর একটা নিঃশ্বাস মোচন করিলেন। তাঁহার হাতখানি রমা কিছুক্ষণ নীরবে নাড়াচাড়া করিয়া ধীরে ধীরে বড় করুণকণ্ঠে কহিল,—“আচ্ছা জ্যাঠাইমা, মিথ্যে-সাক্ষী দিয়ে নিরপরাধীকে দণ্ডভোগ করানোর শাস্তি কি?” বিশ্বেশ্বরী জানালার বাহিরে চাহিয়া রমার বিপর্য্যস্ত রুক্ষ চুলের রাশির মধ্যে অঙ্গুলি-চালনা করিতে হঠাত দেখিলেন, তাহার নির্মীলিত দুই চোখের প্রান্ত বাহিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িতেছে। সস্নেহে মুছাইয়া দিয়া কহিলেন,—“কিন্তু তোমার ত হাত ছিল না মা। মেয়েমানুষের এত বড় কলঙ্কের ভয় দেখিয়ে যে কাপুরষেরা তোমার ওপর এই অত্যাচার ক’রেচে, এর সমস্ত গুরুদণ্ডই তাদের। তোমাকে ত এর একটি কিছুই বইতে হবে না মা।” বলিয়া তিনি আবার তাহার চক্ষু মুছাইয়া দিলেন। তাঁহার এইটুকুমাত্র আশ্বাসই রমার রুদ্ধ-অশ্রু এইবার প্রস্রবণের ন্যায় ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে সে কহিল,—“কিন্তু, তাঁরা যে তাঁর শত্রু। তাঁরা বলেন, ‘শত্রুকে যেমন করেই হৌক্, নিপাত কর্তে দোষ নেই।’ কিন্তু আমার ত সে কৈফিয়ত নেই জ্যাঠাইমা।”
“তোমারই বা কেন নেই মা?” প্রশ্ন করিয়া তিনি দৃষ্টি আনত করিতেই অকস্মাৎ তাঁহার চোখের উপর যেন বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল। যে সংশয় মুখ ঢাকিয়া এতদিন তাঁহার মনের মধ্যে অকারণে আনাগোনা করিয়া বেড়াইত, সে যেন তাহার মুখোস ফেলিয়া দিয়া একে-