চোখে পড়ে—সেইখানে যাই। আমি সব বুঝ্তে পেরেচি রমা। যদি যাবার দিনই তোর এগিয়ে এসে থাকে, মা, তবে এ বিষ বুকে পূরে জ্বলে পুড়ে সেখানে গেলে ত চল্বে না। আমরা বামুনের মেয়ে, সেখানে যাবার দিনটিতে আমাদের তার মতই গিয়ে উপস্থিত হ’তে হবে।” রমা অনেকক্ষণ চুপ করিয়া পড়িয়া থাকিয়া, একটা উচ্ছ্বসিত দীর্ঘশ্বাস আয়ত্ত করিতে করিতে শুধু কহিল,—“আমিও তেমনি ক’রেই যেতে চাই জ্যাঠাইমা।”
কারাপ্রাচীরের বাহিরেই যে তাহার সমস্ত দুঃখ ভগবান্ এমন করিয়া সার্থক করিয়া দিবার আয়োজন করিয়া রাখিয়াছিলেন, ইহা বোধ করি রমেশের উন্মত্ত-বিকারেও আশা করা তাহার পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। ছয়মাস সশ্রম অবরোধের পর মুক্তিলাভ করিয়া সে জেলের বাহিরে পা দিয়াই দেখিল, অচিন্তনীয় ব্যাপার! স্বয়ং বেণী ঘোষাল মাথায় চাদর জড়াইয়া সর্ব্বাগ্রে দণ্ডায়মান! তাঁহার পশ্চাতে উভয় বিদ্যালয়ের মাষ্টার, পণ্ডিত ও ছাত্রের দল, কয়েকজন হিন্দু-মুসলমান প্রজা। বেণী সজোরে আলিঙ্গন করিয়া কাঁদ কাঁদ গলায় কহিল,—“রমেশ, ভাই রে, নাড়ীর টান যে এমন টান এবার তা’ টের পেয়েছি। যদু মুখুয্যের মেয়ে যে আচায্যি হারামজাদাকে হাত ক’রে, এমন শত্রুতা ক’র্বে, লজ্জা সরমের মাথা