খেয়ে নিজে এসে মিথ্যে-সাক্ষী দিয়ে এত দুঃখ দেবে, সে কথা জেনেও যে আমি তখন জান্তে চাইনি, ভগবান্ তার শাস্তি আমাকে ভালমতেই দিয়েছেন। জেলের মধ্যে তুই বরং ছিলি ভাল রমেশ, বাইরে এই ছ’টা মাস আমি যে তুষের আগুনে জ্বলে-পুড়ে গেছি!” রমেশ কি করিবে, কি বলিবে, ভাবিয়া না পাইয়া হতবুদ্ধি হইয়া চাহিয়া রহিল। হেডমাষ্টার পাড়ুইমশাই একেবারে ভূলুণ্ঠিত হইয়া রমেশের পায়ের ধূলা মাথায় লইলেন। তাহার পিছনের দলটি তখন অগ্রসর হইয়া কেহ আশীর্ব্বাদ, কেহ সেলাম, কেহ প্রণাম করিবার ঘটায় সমস্ত পথটা যেন চষিয়া ফেলিতে লাগিল। বেণীর কান্না আর মানা মানিল না। অশ্রুগদ্গদকণ্ঠে কহিল,—“দাদার ওপর অভিমান রাখিস্নে, ভাই বাড়ী চল্। মা কেঁদে কেঁদে দু’চক্ষু অন্ধ কর্বার যোগাড় করেচেন!” ঘোড়ার গাড়ী দাঁড়াইয়াছিল; রমেশ বিনাবাক্যব্যয়ে তাহাতে চড়িয়া বসিল। বেণী সম্মুখের আসনে স্থানগ্রহণ করিয়া মাথার চাদর খুলিয়া ফেলিল। ঘা শুকাইয়া গেলেও আঘাতের চিহ্ন জাজ্বল্যমান। রমেশ আশ্চর্য্য হইয়া কহিল,—“ও কি বড়দা’?” বেণী একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলিয়া ডান হাত উলটাইয়া কহিল,—“কাকে আর দোষ দেব ভাই, এ আমার নিজেরই কর্ম্মফল—আমারই পাপের শাস্তি! কিন্তু, সে আর শুনে কি হবে?” বলিয়া মুখের উপর গভীর বেদনার আভাস ফুটাইয়া চুপ করিয়া রহিল। তাহার নিজের মুখের এই সরল স্বীকারোক্তিতে রমেশের চিত্ত