দেখ্লে কিছুই জানিনে। দশদিন পরে জ্ঞান হ’য়ে দেখ্লাম, হাঁসপাতালে প’ড়ে আছি। এ যাত্রা যে রক্ষে পেয়েচি সে কেবল মায়ের পুণ্যে—এমন মা কি আর আছে রমেশ! রমেশ একটি কথাও কহিতে পারিল না, কাঠের মূর্ত্তির মত শক্ত হইয়া বসিয়া রহিল। শুধু কেবল তাহার দুই হাতের দশ অঙ্গুলি জড় হইয়া বজ্রকঠিন মুঠায় পরিণত হইল। তাহার মাথায় ক্রোধ ও ঘৃণার যে ভীষণ বহ্নি জ্বলিতে লাগিল, তাহার পরিমাণ করিবারও তাহার সাধ্য রহিল না। বেণী যে কত মন্দ, তাহা সে জানিত। তাহার অসাধ্য যে কিছুই নাই, ইহাও তাহার অপরিজ্ঞাত ছিল না। কিন্তু, সংসারে কোনো মানুষই যে এত অসত্য এমন অসঙ্কোচে, এরূপ অনর্গল উচ্চারণ করিয়া যাইতে পারে, তাহা কল্পনা করিবার মত অভিজ্ঞতা তাহার ছিল না। তাই, সে রমার সমস্ত অপরাধই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিল।
সে দেশে ফিরিয়া আসায় গ্রামময় যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল। প্রতিদিন সকালে, দুপুরে এবং রাত্রি পর্য্যন্ত এত জনসমাগম, এত কথা, এত আত্মীয়তার ছড়াছড়ি পড়িয়া গেল যে, কারাবাসের যেটুকু গ্লানি তাহার মনের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল দেখিতে দেখিতে তাহা উড়িয়া গেল। তাহার অবর্ত্তমানে গ্রামের মধ্যে যে খুব বড় একটা সামাজিক স্রোত ফিরিয়া গিয়াছে, তাহাতে কোন সংশয় নাই; কিন্তু এই কয়টা মাসের মধ্যেই এত বড় পরিবর্ত্তন কেমন করিয়া সম্ভব হইল, ভাবিতে গিয়া তাহার চোখে পড়িল, বেণীর প্রতিকূলতায় যে শক্তি