বিন্দুবৎ হইয়া গেল, তাহার সুস্পষ্ট হেতু সে নিজেও খুঁজিয়া পাইল না! রমেশ চুপ করিয়া রহিল। বেণী, কাজ হইতেছে জানিলে, ধৈর্য্য ধরিতে জানে। সে তখনকার মত আর পীড়াপীড়ি না করিয়া, চলিয়া গেল।
এবার আর একটা জিনিস রমেশের বড় দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল। বিশ্বেশ্বরীর কোন দিনই সংসারে যে বিশেষ আসক্তি ছিল না, তাহা সে পূর্ব্বেও জানিত, কিন্তু এবার ফিরিয়া আসিয়া সেই অনাসক্তিটা যেন বিতৃষ্ণায় পরিণত হইয়াছে বলিয়া তাহার মনে হইতেছিল। কারাগার হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়া বেণীর সমভিব্যাহারে যে দিন সে গৃহে প্রবেশ করিয়াছিল, সে দিন বিশ্বেশ্বরী আনন্দ-প্রকাশ করিয়াছিলেন, সজল-কণ্ঠে বারংবার অসংখ্য আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন, তথাপি কি-যেন-একটা তাহাতে ছিল, যাহাতে সে ব্যথাই পাইয়াছিল। আজ হঠাৎ কথায় কথায় শুনিল,—বিশ্বেশ্বরী কাশী-বাস সঙ্কল্প করিয়া যাত্রা করিতেছেন, আর ফিরিবেন না। শুনিয়া সে চমকিয়া গেল। কৈ, সে ত কিছুই জানে না! নানাকাজে পাঁচছয় দিনের মধ্যে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হয় নাই; কিন্তু, যে দিন হইয়াছিল, সে দিন ত তিনি কোন কথা বলেন নাই। যদিচ সে জানিত, তিনি নিজে হইতে আপনার বা পরের কথা আলোচনা করিতে কোন দিন ভালবাসেন না, কিন্তু, আজকের সংবাদটার সহিত সে দিনের স্মৃতিটা পাশাপাশি চোখের সাম্নে তুলিয়া ধরিবামাত্র তাঁহার এই একান্ত বৈরাগ্যের অর্থ দেখিতে