প্রশ্ন করিল—“তার মানে?” রমা কহিল,—“মানে যদি কখনও শুন্তে পাও, সেদিন শুধু এই কথাটি মনে করো, আমি কেমন ক’রে নিঃশব্দে সহ্য ক’রে চলে গেছি,—একটি কথারও প্রতিবাদ করিনি। একদিন যখন অসহ্য মনে হয়েছিল, সে দিন জ্যাঠাইমা এসে বলেছিলেন,—‘মা, মিথ্যেকে ঘাঁটাঘাঁটি ক’রে জাগিয়ে তুল্লেই তার পরমায়ু বেড়ে ওঠে। নিজের অসহিষ্ণুতায় তার আয়ু বাড়িয়ে তোলার মতোন পাপ অল্পই আছে।’ তাঁর এই উপদেশটি মনে রেখে, আমি সকল দুঃখ-দুর্ভাগ্যই কাটিয়ে উঠেচি—এটি তুমিও কোন দিন ভুলো না রমেশ দা’।” রমেশ নীরবে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। রমা ক্ষণেক পরে কহিল,—“আজ আমাকে তুমি ক্ষমা কর্তে পার্চ না মনে ক’রে দুঃখ কোরো না, রমেশ দা’। আমি নিশ্চয় জানি, আজ যা’ কঠিন ব’লে মনে হচ্চে, একদিন তাই সোজা হয়ে যাবে। সেদিন আমার সকল অপরাধ তুমি সহজেই ক্ষমা কর্বে জেনে আমার মনের মধ্যে আর কোন ক্লেশ নেই। কা’ল আমি যাচ্চি।”
“কা’ল?” রমেশ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল,—“কোথায় যাবে কা’ল?” রমা কহিল,—“জ্যাঠাইমা যেখানে নিয়ে যাবেন, আমি সেইখানেই যাব।” রমেশ কহিল,—“কিন্তু, তিনি ত আর ফিরে আস্বেন না শুন্চি।” রমা ধীরে ধীরে বলিল,—“আমিও না। আমিও তোমাদের পায়ে জন্মের মত বিদায় নিচ্চি।” বলিয়া সে হেঁট হইয়া মাটীতে মাথা ঠেকাইল।