রমেশ মুহূর্ত্তকাল চিন্তা করিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল,—“আচ্ছা, যাও। কিন্তু, কেন বিদায় চাইচ, সেও কি জান্তে পার্ব না?” রমা মৌন হইয়া রহিল। রমেশ পুনরায় কহিল, “কেন যে তোমার সমস্ত কথাই লুকিয়ে রেখে চ’লে গেলে, সে তুমিই জানো। কিন্তু, আমিও কায়মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, একদিন যেন তোমাকে সর্ব্বান্তঃকরণেই ক্ষমা কর্তে পারি। তোমাকে ক্ষমা কর্তে না পারায় যে আমার কি ব্যথা, সে শুধু আমার অন্তর্যামীই জানেন।” রমার দুই চোখ বাহিয়া ঝর্-ঝর্ করিয়া জল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। কিন্তু, সেই অত্যন্ত মৃদু-আলোকে রমেশ তাহা দেখিতে পাইল না। রমা নিঃশব্দে দূর হইতে তাহাকে আর একবার প্রণাম করিল, এবং পরক্ষণেই রমেশ ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। পথে চলিতে চলিতে তাহার মনে হইল, তাহার ভবিষ্যৎ, তাহার সমস্ত কাজকর্ম্মের উৎসাহ যেন এক নিমিষে, এই জ্যোৎস্নার মতই অস্পষ্ট-ছায়াময় হইয়া গেছে।
পরদিন সকালবেলায় রমেশ এ বাড়ীতে আসিয়া যখন উপস্থিত হইল, তখন বিশ্বেশ্বরী যাত্রা করিয়া পাল্কীতে প্রবেশ করিয়াছেন। রমেশ দ্বারের কাছে মুখ লইয়া অশ্রু-ব্যাকুলকণ্ঠে কহিল,—“কি অপরাধে আমাদের এত শীঘ্র ত্যাগ ক’রে চল্লে জ্যাঠাইমা?” বিশ্বেশ্বরী ডানহাত বাড়াইয়া রমেশের মাথায় রাখিয়া বলিলেন,—“অপরাধের কথা ব’ল্তে গেলে ত শেষ হবে না বাবা। তায় কাজ নেই।” তাঁর পরে বলিলেন,—“এখানে