রমেশ তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে পথে আসিয়া আর্দ্রকণ্ঠে কহিল, “ভট্চায্যি মশাই, এই দুটো তিনটে দিন আমার ওপর দয়া রাখ্বেন। আর বল্তে সঙ্কোচ হয়, কিন্তু এ বাড়ীতে হরিধনের মায়ের যদি পায়ের ধুলো পড়ে ত ভাগ্য ব’লে মনে কর্ব।” ভট্চায্যি মশায় ব্যস্ত হইয়া নিজের দুই হাতের মধ্যে রমেশের দুই হাত চাপিয়া ধরিয়া কাঁদ-কাঁদ হইয়া বলিলেন, “আমি বড় দুঃখী, বাবা রমেশ, আমাকে এমন ক’রে বল্লে যে লজ্জায় ম’রে যাই।”
ছেলেমেয়ে সঙ্গে করিয়া বৃদ্ধ ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। রমেশ ফিরিয়া আসিয়া মুহূর্ত্তের জন্য নিজের রূঢ় কথা স্মরণ করিয়া গাঙুলী মশায়কে কিছু বলিবার চেষ্টা করিতেই, তিনি থামাইয়া দিয়া উদ্দীপ্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “এ যে আমার নিজের কাজ, রমেশ, তুমি না ডাক্লেও যে আমাকে নিজে এসেই সমস্ত কর্তে হ’ত। তাই ত এসেছি; ধর্ম্মদাস-দা’ আর আমি দুই ভায়ে ত তোমার ডাক্বার অপেক্ষা রাখিনি, বাবা।” ধর্ম্মদাস এইমাত্র তামাক খাইয়া কাসিতেছিল। লাঠিতে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া কাসির ধমকে চোখ-মুখ রাঙা করিয়া, হাত ঘুরাইয়া বলিল, “বলি শোন রমেশ, আমরা বেণী ঘোষাল নই। আমাদের জন্মের ঠিক আছে।” তাহার কুৎসিত কথায় রমেশ চম্কাইয়া উঠিল। কিন্তু আর রাগ করিল না। এই অত্যল্প সময়ের মধ্যেই সে বুঝিয়াছিল, ইহারা শিক্ষা ও অভ্যাসের দোষে অসঙ্কোচে কত বড় গর্হিত কথা যে উচ্চারণ করে, তাহা জানেও না।