পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৭
পল্লী-সমাজ


পথ হইতে ফিরিয়া আসিয়া সেই রাত্রেই আবার বেণী ঘোষালের বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিল। চণ্ডীমণ্ডপের মধ্যে তখন তর্ক-কোলাহল উদ্দাম হইয়া উঠিয়াছিল; কিন্তু সে শুনিতেও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। সোজা ভিতরে প্রবেশ করিয়া রমেশ ডাকিল, “জ্যাঠাইমা!”

 জ্যাঠাইমা তাঁহার ঘরের সুমুখের বারান্দায় অন্ধকারে চুপ করিয়া বসিয়াছিলেন; এত রাত্রে রমেশের গলা শুনিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন। “রমেশ? কেন রে?” রমেশ উঠিয়া আসিল। জ্যাঠাইমা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “একটু দাঁড়া, বাবা, একটা আলো আন্‌তে ব’লে দি।” “আলোয় কাজ নেই জ্যাঠাইমা, তুমি উঠো না।” বলিয়া রমেশ অন্ধকারেই একপাশে বসিয়া পড়িল। তখন জ্যাঠাইমা প্রশ্ন করিলেন, “এত রাত্তিরে যে?”

 রমেশ মৃদু কণ্ঠে কহিল, “এখনো ত নিমন্ত্রণ করা হয়নি, জ্যাঠাইমা, তাই তোমাকে জিজ্ঞেস কর্‌তে এলুম।” “তবেই মুস্কিলে ফেল্‌লি বাবা! এঁরা কি বলেন? গোবিন্দ গাঙ্গুলী, চাটুয্যে মশাই—” রমেশ বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল, “জানিনে, জ্যাঠাইমা, কি এঁরা বলেন। জান্‌তেও চাইনে—তুমি যা’ বল্‌বে তাই হবে।” অকস্মাৎ রমেশের কথার উত্তাপে বিশ্বেশ্বরী মনে মনে বিস্মিত হইয়া ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া বলিলেন, “কিন্তু তখন যে বল্‌লি রমেশ, এরাই তোর সব চেয়ে আপনার! তা’ যাই হোক, আমার মেয়েমানুষের কথায় কি হবে বাবা?