রমা ইহা লক্ষ্য করিয়া মাসীকে তিরস্কারের কণ্ঠে কহিল, “কেন মাসি, তুমি মানুষের জাত নিয়ে কথা কও? জাত ত আর কারুর হাতেগড়া জিনিস নয়? যে যেখানে জন্মেচে সেই তার ভাল।” বেণী লজ্জিতভাবে একটুখানি হাসিয়া কহিল,—“না, রমা, মাসী ঠিক কথাই বলচেন। তুমি কত বড় কুলীনের মেয়ে, তোমাকে কি আমরা ঘরে আন্তে পারি বোন্! ছোট খুড়োর এ কথা মুখে আনাই বেয়াদপি। আর তুক্তাকের কথা যদি বল, ত’ সে সত্যি। দুনিয়ায় ছোট খুড়ো আর ঐ ব্যাটা ভৈরব আচায্যির অসাধ্য কাজ কিছু নেই। ঐ ভৈরব ত হয়েচে আজকাল রমেশের মুরুব্বি।”
মাসী কহিলেন—“সে ত জানা কথা বেণি! ছোঁড়া দশ বারো বচ্ছর ত দেশে আসেনি—এতদিন ছিল কোথায়?” “কি ক’রে জান্ব মাসি? ছোট খুড়োর সঙ্গে তোমাদেরও যে ভাব, আমাদেরও তাই। শুন্চি, এতদিন নাকি বোম্বাই, না, কোথায় ছিল। কেউ বল্চে, ডাক্তারি পাশ ক’রে এসেচে, কেউ বল্চে, উকিল হয়ে এসেচে—কেউ বল্চে, সমস্তই ফাঁকি—ছোঁড়া নাকি পাঁড় মাতাল! যখন বাড়ী এসে পৌঁছল, তখন দুই চোখ নাকি জবাফুলের মত রাঙা ছিল।” “বটে? তা হ’লে তাকে ত বাড়ী ঢুক্তে দেওয়াই উচিত নয়!” বেণী উৎসাহভরে মাথার একটা ঝাঁকানি দিয়া কহিল—“নয়ই ত! হাঁ রমা, তোমার রমেশকে মনে পড়ে?” নিজের হতভাগ্যের প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়ায় রমা মনে মনে লজ্জা পাইয়াছিল। সলজ্জ মৃদু হাসিয়া