পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/৫৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লী-সমাজ
৫৪


তামাক সাজিয়া মধু-দোকানি বাঁড়ুয্যের হাতে হুঁকাটা তুলিয়া দিয়া, প্রশ্ন করিল, “তার পরে? একটু চাক্‌রি-বাক্‌রি হয়েছিল ত?” “হবে না? এ কি ধান দিয়ে লেখাপড়া শেখা আমার?—হ’লে হবে কি,—সেখানে কে থাক্‌তে পারে বল! যেমন ধুঁয়া—তেমনি কাদা। বাইরে বেরিয়ে গাড়ীঘোড়া চাপা না প’ড়ে যদি ঘরে ফির্‌তে পারিস্‌, ত জান্‌বি, তোর বাপের পুণ্যি!” মধু কখনও কলিকাতায় যায় নাই। মেদিনীপুর সহরটা, একবার সাক্ষ্য দিতে গিয়া, দেখিয়া আসিয়াছিল মাত্র। সে ভারি আশ্চর্য্য হইয়া কহিল, “বলেন কি!” বাঁড়ুয্যে ঈষৎ হাসিয়া কহিল-“তোর রমেশ বাবুকে জিজ্ঞাসা কর না, সত্যি না মিথ্যে। না মধু, খেতে না পাই, বুকে হাত দিয়ে ঘরে প’ড়ে ম’রে থাকব, সে ভাল, কিন্তু বিদেশ যাবার নামটি যেন কেউ আমার কাছে আর না করে। বল্‌লে বিশ্বেস করবিনে, সেখানে শুষ্‌ণি-কলমি শাক, চালতা, আমড়া, খোড়-মোচা পর্য্যন্ত কিনে খেতে হয়! পার্‌বি খেতে? এই একটি মাস না খেয়ে-খেয়ে যেন রোগা ইঁদুরটি হয়ে গেচি! দিবারাত্রি পেট ফুট-ফাট করে, বুকজ্বালা করে, প্রাণ আইঢাই করে, পালিয়ে এসে তবে হাঁফ-ছেড়ে বাঁচি। না বাবা, নিজের গাঁয়ে ব’সে জোটে একবেলা, একসন্ধ্যে খাবো; না জোটে, ছেলেমেয়ের হাত ধ’রে ভিক্ষে করব; বামুনের ছেলের তাতে কিছু আর লজ্জার কথা নেই, কিন্তু, মা লক্ষী মাথায় থাকুন—বিদেশ কেউ যেন না যায়!” তাঁহার কাহিনী শুনিয়া সকলে যখন সভয়ে নির্ব্বাক