মাস—দেখ্লে বাবা রমেশ, এদের ব্যাভারটা একবার দেখ্লে?” মধু এতটুকু হইয়া গিয়া অস্ফুট বলিতে গেল, “অনেক দিনের—” “হলই বা অনেক দিনের? এমন ক’রে সবাই মিলে পিছনে লাগ্লে ত আর গাঁয়ে বাস করা যায় না।” বলিয়া বাঁড়ুয্যে একরকম রাগ করিয়াই নিজের জিনিসপত্র লইয়া চলিয়া গেলেন।
রমেশ ফিরিয়া আসিয়া বাড়ী ঢুকিতেই এক ভদ্রলোক শশব্যস্তে হাতের হুঁকাটা একপাশে রাখিয়া দিয়া, একবারে পায়ের কাছে আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিল। উঠিয়া কহিল, “আমি বনমালী পাড়ুই—আপনাদের ইস্কুলের হেডমাষ্টার। দুদিন এসে সাক্ষাৎ পাইনি; তাই বলি—” রমেশ সমাদর করিয়া পাড়ুইমহাশয়কে চেয়ারে বসাইতে গেল; কিন্তু সে সসম্ভ্রমে দাঁড়াইয়া রহিল। কহিল, “আজ্ঞে, আমি যে আপনার ভৃত্য।” লোকটা বয়সে প্রাচীন এবং আর-যেই-হোক একটা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাহার এই অতি বিনীত কুণ্ঠিত ব্যবহারে রমেশের মনের মধ্যে একটা অশ্রদ্ধার ভাব জাগিয়া উঠিল। সে কিছুতেই আসন-গ্রহণে স্বীকৃত হইল না, খাড়া দাঁড়াইয়া নিজের বক্তব্য কহিতে লাগিল। এদিকের মধ্যে এই একটা অতি ছোট রকমের ইস্কুল, মুখুয্যে ও ঘোষালদের যত্নে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। প্রায় ৩০।৪০ জন ছাত্র পড়ে। দুই তিন ক্রোশ দূর হইতেও কেহ কেহ আসে। যৎকিঞ্চিৎ গভর্ণমেণ্ট-সাহায্যও আছে।